
নারী ও পুরুষ ভুল করে কোথায় | আল বাহি আল খাওলি |
---|---|
প্রকাশনীঃ | পিস পাবলিকেশন |
বইয়ের সাইজঃ | ৫-এমবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ২৯১ |
বইয়ের ফরম্যাট | পিডিএফ ই-বুক |
বিভাগঃ | পারিবারিক জীবন |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
ইসলামে নারীর মানবাধিকার
আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে, অতীতের অনেক সভ্য সমাজেও তা ধর্মভিত্তিক হোক বা ধর্মহীন নির্বিশেষে নারীকে মানুষ বলে স্বীকার করা হবে কি না তা তর্ক-বির্তকের বিষয় ছিল। তারা এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করত, নারীও কি পুরুষের মতো উপাসনা করতে সক্ষম? নারীও কি পুরুষের মতো পরকালীন জীবনে প্রবেশ করবে? একটি বিষয়ে তাদের মতৈক্য ছিল যে, নারী হচ্ছে এক অপবিত্র জীব। একে শুধু পুরুষের সেবা ও মনোরঞ্জনের জন্যই এ পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ এরকম আরও বহু অর্থহীন ও নোংরা ধারণার শিকারে পরিণত ছিল প্রাচীন যুগের পুরুষ সম্প্রদায়। এমন অমানবিক চিন্তাধারা ও কার্যকলাপ যখন চরম সীমায় উপনীত হয় তখনই নারী তথা সমগ্র নির্যাতিত মানবতার চিরমুক্তির পয়গাম নিয়ে পৃথিবীর বুকে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে।
ইসলাম প্রথমেই নারী জাতির অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে। তার দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করে, তার পূর্ণ মানবিক অধিকার বহাল করে এবং নারীর এত বেশি মর্যাদা দেয়া হয় যে, সাহাবারা পর্যন্ত অবাক হয়ে যান। নারী জাতিকে হাজার হাজার বছরের শোষণ-নির্যাতন, অবিচার-বঞ্চনা ও অত্যাচার-অধীনতার নির্মম নাগপাশ থেকে পূর্ণ মুক্তি দেয়ার জন্যে ইসলামের এসব ঘোষণা ও ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য ছিল।
ইসলাম নারীর পূর্ণ অর্থনৈতিক স্বাধিকার দিয়ে তাকে পুরুষের সমান অধিকার ও ক্ষমতা অর্পণ করে। এভাবে নারীকে শতাব্দীর নিষ্ঠুর শোষণের অক্টোপাশ থেকে স্বাধীন করে তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে উজ্জ্বল করে তুলে। এর চেয়েও বড় কথা, ইসলাম নারীকে সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশীদার গণ্য করে তার ওপর সমাজ সংস্কারের দায়িত্বও ন্যস্ত করে। তার কর্মক্ষেত্র ও তার ভূমিকা পালনে সীমা নির্ধারণও করে দেয় ইসলাম। নারী সমাজ যাতে তাদের উন্নত মর্যাদায় নির্দেশ যথার্থ পথে অগ্রগতি অর্জন করতে পারে এবং নিজেদের হীনমন্যতা, পুরনো বিভ্রান্তি ও কুসংস্কার থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে সে জন্যে ইসলাম সঠিক ও বাস্তবানুগ কর্মপন্থা নির্ধারণ করে।
নারী ও পুরুষ ভুল করে কোথায়
নারীর ধর্মীয় মর্যাদা আমরা পূর্বেই ইঙ্গিত প্রদান করেছি যে, নারীর ধর্মীয় অধিকার ও মর্যাদার ব্যাপারটি খোদাভীরুতার উপদেশ দানের মধ্যেই নিহিত আছে। এর কারণ হলো তার মানবিক বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি অর্থাৎ বুদ্ধিগত ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে তার দায়িত্ব ঠিক পুরুষেরই সমান এবং এ ব্যাপারে তাকে পুরুষের মতোই যোগ্য বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কারণেই আল্লাহ তা'আলা যখন আদি মানব আদমকে বেহেশতে থাকার জন্যে বলেন এবং নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করতে নিষেধ করেন তখন সেই আদেশ ও নিষেধের বাধা অতিক্রম করে সম্বোধন আদি মাতা হাওয়ার প্রতিও ছিল, যেমনটি ছিল হযরত আদমের প্রতি। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে:
"এবং হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী উভয়ই এ জান্নাতে বসবাস করতে থাক, সেখানে যে জিনিস তোমাদের ইচ্ছে হয় খাও, কিন্তু ঐ বৃক্ষের নিকট যেও না, নয়তো অত্যাচারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আরাফ: আয়াত-১৯)
এরপর যখন আল্লাহ তা'আলা তাদের অবাধ্যতার জন্যে ভর্ৎসনা করেন তখনও উভয়কে একই সাথে সম্বোধন করে বলেন:
"আমরা কি তোমাদের উভয়কেই ঐ গাছের নিকটে যাওয়া থেকে বাধা দিইনি।"
তাছাড়া ইসলাম নারী-পুরুষের ক্ষমতার শুধু সংবাদই দেননি বরং তাকে হাতে কলমে বাস্তবায়ন ও তার স্থায়িত্ব এবং স্থিতিশীলতা দানের উদ্দেশ্যে তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহির উপলব্ধিও সৃষ্টি করেন। এর সাথে সাথে নারীদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণে একটি বিশেষ বাইয়াতের আয়োজনও করা হয় যেন তাদের এক পৃথক মর্যাদা স্বীকৃত হয় এবং তারা যেন শুধুমাত্র বাবা, ভাই বা অন্য কোনো মানুষের চাপে পড়ে ইসলাম কবুল না করে। ইসলাম গ্রহণ করা সম্পর্কেও নারীদের পরিপূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতার অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
নারীর সামাজিক অধিকার
ইসলাম নারীর সামাজিক অধিকারও দিয়েছে এবং এ উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত আইনবিধি প্রবর্তন করেছে-
ক. মেয়ে যখন বালেগ অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কে পৌঁছে এবং তার জ্ঞান-বুদ্ধির বিকাশ ঘটে সব বিষয় ও সম্পর্কে ভালো করে অনুধাবন করতে শুরু করে তখন তার ব্যক্তিগত ধনসম্পদ ও নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যাবতীয় অধিকার অর্জিত হয়ে যায়। এখন সে চাইলে পৃথক কোনোরূপ বাসগৃহেও অবস্থান করতে পারে। এ ব্যাপারে তার আত্মীয়স্বজনের হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই, তাকে কেউ নিজেদের সাথে থাকার জন্যে বাধ্য করতে পারে না। অবশ্য শর্ত হলো সে যেন সচেতন ও সজ্ঞান হয় যাতে নিজেই তার জানমাল ও ইজ্জত আব্রুর নিরাপত্তা বিধান করতে পারে।
শাব্দিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আহমদ ইব্রাহীম বলেন, "মেয়ে যখন যৌবনপ্রাপ্ত হয়, বা বিবাহিতা হোক বা অবিবাহিতা তার অবস্থা যদি অসন্তোষজনক হয় তাহলে তার পিতা অথবা অন্য কোনো দায়িত্বশীলের এ অধিকার বর্তায় যে, সে তাকে নিজের কাছেই থাকার জন্যে বাধ্য বাধকতা প্রয়োগ করবে। কিন্তু মেয়ে যদি জ্ঞানী বুদ্ধিমতী ও মর্যাদাবান হয় তাহলে তাকে কাছে রাখার জন্যে বাধ্য করার অধিকার কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির থাকে না। অবশ্য বিয়ের পর মেয়ের এ অধিকার স্বভাবতঃই সমাপ্ত হয়ে যায় এবং তার পক্ষে স্বামীর সাথে অবস্থান করা অপরিহার্য হয়ে উঠে যেন সে তার দাম্পত্যের অধিকার ও দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারে। এটা এমন এক স্বাভাবিক কথা যার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের কোনো প্রয়োজন নেই।"