ইসলামী দর্শন pdf free download - শিবলী নুমানী

book cover islami dhorshon
ইসলামী দর্শন শিবলী নুমানী
প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বইয়ের সাইজঃ ৬-এমবি
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪২৯
বইয়ের ফরম্যাট PDF E-BOOK
বিভাগঃ ইসলামী দর্শন
কৃতজ্ঞতায়ঃ বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার

ইলমে কালাম এর উপকারিতা

সক্রেটিস, প্লেটো ও অ্যারিস্টটঞ্জের যঙ্গকে দর্শনের 'স্বর্ণযুগ' বল্লা হয়। এঁরা মৌলিক চিন্তাধারার প্রাচুর্যে তহযিব-তমদ্দুনের কায়ার নবপ্রাণ সঞ্চার করেন; বিশ্ব, আত্মা এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন মতবাদ প্রবর্তন করেন। এসব মতবাদ ক্রমশ বিপ্লবের আকার ধারণ করে। ফলে, এমন একটি চিন্তাধারা গড়ে উঠে, যার বহুল প্রচার ও প্রভাব দীর্ঘকাল যাবত আকায়েদ অর্থাৎ ধর্মীয় বিশ্বাস-দেহে আঘাত হানতে থাকে। এর অশুভ পরিণতির কথা ভেবে কেবল রাজনীতিবিদরাই নয়, শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সেরা লোকেরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এর আরো একটি প্রতিক্রিয়া এই দাঁড়ালো যে, পরবর্তী বংশধরেরা জীবন দর্শনের প্রত্যেকটি দিক নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামাতে আরম্ভ করে।

দর্শন জন্ম নেয় সন্দেহের গর্ভে এবং তা জীবনীশক্তি লাভ করে ধর্ম এবং আকায়েদের সংস্পর্শ ছাড়াই। সুতরাং, দর্শনের বহুল চর্চা ইসলামী দর্শন এবং সুক্ষ্ম আলোচনা মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিকে জড়সড় করে তোলে। দার্শনিকগণ আল্লাহ্ এবং বিশ্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তাঁরা যুক্তি ও জ্ঞানের আলোকে আল্লাহর অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রামান্সে উঠে পড়ে লাগলেন।

ধর্মীয় বিশ্বাসে মতভেদ সৃষ্টির প্রথম কারণ

ইসলামের গণ্ডি যখন আরব ছেড়ে অনেকদূর প্রসারিত হলো, ইরানী, গ্রীক, কির্তী এবং আরো অন্যান্য জাতি যখন মুসলিম দেশের সীমারেখায় প্রবেশ করলো, তখন থেকেই আকাইদ নিয়ে সূক্ষ্ম আলোচনা ও পর্যালোচনা শুরু হয়। কারণ টীকা-টিপ্‌পনী কাটা এবং তিলকে তাল করাই ছিল অনারবদের স্বভাব।

দ্বিতীয় কারণ:

দ্বিতীয় কারণ ছিল এই যে, যে সব জাতি ইসলামে দীক্ষিত হয়, তারা পূর্ববর্তী ধর্মে আল্লাহর গুণাবলী, বিধি-বিধান, প্রতিদান ও শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ে ভিন্ন ধারণা পোষণ করতো। একাধিক আল্লাহ্ত্র অস্তিত্ব, আল্লাহ্ অংশীদারত্ব, স্মৃতিপূজা এরূপ তাদের অনেক ধ্যান-ধারণা ছিল, যা স্পষ্টত ইসলাম বিরোধী। তারা যখন ইসলাম গ্রহণ করলো, তখন তাদের এসব ভাবধারা মন থেকে সম্পূর্ণ ধুয়ে মুছে যায়। কিন্তু ইসলামের যে সব আকাইদে বিভিন্ন দিক রয়েছে, অর্থাৎ যাদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা যায় এবং তন্মধ্যে যেগুলোর সাথে তাদের পূর্ববর্তী ধর্মীয় বিশ্বাসের কিছুটা সাদৃশ্যও রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে পুরনো ধ্যান-ধারণার দিকে ধাবিত হওয়াটা ছিল তাদের পক্ষে স্বাভাবিক ব্যাপার। বিভিন্ন ধর্মের লোক ইসলামে দীক্ষিত হয়। তাদের সাবেক ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল পরস্পর বিরোধী। তাই ইসলামের উপর তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া না হয়ে পারেনি। ধরুন, ইহুদী ধর্মে আল্লাহকে 'শরীরী মানুষ' রাপে জ্ঞান করা হয়। আল্লাহর চোখে উঠে, চোখে যন্ত্রণাও হয়, ফেরেশতা তার সেবা করে। সে কখনো কখনো পয়গম্বরের সাথে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং দৈবক্রমে আঘাতও প্রাপ্ত হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

আরও বই ডাউনলোড করুন
আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ভুমিকা ডাউনলোড
আপনাদের প্রশ্নের জবাব ১-৩ খন্ড পিডিএফ বই ডাউনলোড
তাফসীর আয়াতুল কুরসী - ডাঃ ফযলে ইলাহ ডাউনলোড

এরূপ ভাবধারার ধারক ও বাহক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলো। তাদের নজর কুরআনের সেসব আয়াতের উপর না পড়ে পারেনি, যাতে আল্লাহ্ হাত, মুখ এবং অন্যান্য কায়াবোধক বিভিন্ন শব্দ বিদ্যমান রয়েছে। এসব শব্দ দিয়ে তারা স্বভাবতই এ অর্থ করেছে যে, বস্তুত আল্লাহ্ হাত, পা ইত্যাদি রয়েছে।

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎপত্তি

অঙ্কুরে প্রশাসনিক প্রয়োজনেই 'জবর ও কদর' (মানুষের অক্ষমতা ও সক্ষমতা)-এর প্রশ্নটি সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু যখন একবার কোন কারণে চিন্তাধারায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা আপনা আপনিই বেড়ে চলে। বনু উমাইয়াদের যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই 'খালক-ই কুরআন' অর্থাৎ কুরআনকে চিরন্তন না বলে অভিনব এবং নম্বর বলা, 'তানযীহ' অর্থাৎ আল্লাহকে মানবিক ররূপের উর্ধ্বে মনে করা, 'তাশবীহ' অর্থাৎ আল্লাহকে মানবিক রূপের সাথে তুলনা করা, আল্লাহর গুণাবলীকে তাঁর সত্তার অন্তর্ভুক্তি বা বহির্ভূত মনে করা ইত্যাদি বিতর্কমূলক বিষয়াদি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। যার মুখ থেকে যে কথা বের হতো, সেটাই একটা মতবাদে পরিণত হতো। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই বহু সম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয়। 'মিলাল ও নিহাল' এবং আকাইদের অন্যান্য গ্রন্থে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের পৃথক পৃথক বিবরণ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস লিখিত রয়েছে। এখানে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া সম্ভব নয়।

ইবনে খালদুনের ভ্রম

আল্লামা ইবনে খালদুন তাঁর ইতিহাসের ভূমিকায় ইলমে কালামের বর্ণনায় লিখেছেন, "ইমাম গাযালীর পূর্বে ইলমে কালামে দর্শনের কোন আমেজ ছিল না । তিনিই সর্বপ্রথম দার্শনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ইলমে কালাম পুনর্গঠন করেন।" এটা ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মারাত্মক ভ্রম। পরবর্তী অনেক আলোচনায় তাঁর এ ভ্রম প্রতিপন্ন হবে। ইয়াহইয়া ইবনে খালেদ কর্তৃক আহত ইলমে কালামের সভায় যেসব বিষয় আলোচিত হয়েছে বলে মাস্ট্রদী উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর চাইতে অধিকতর দার্শনিক বিষয় আর কি হতে পারে?

খলিফা মাহদীর পর হিজরী ১৬১ সালে হাদী শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং মার এক বছর তিন মাস শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এরপর মহামতি খলিফা হারুনুর রশিদ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর যুগকে সমৃদ্ধি ও উন্নতির যুগ বলে পরিগণিত করা হয়। যে দরবারে জা'ফর বারমাকী, কাথী আবু ইউসুফ, ইমাম মুহম্মদ, আবু নওয়াস, ইসহাক মুসিলী এবং কাসাইর ন্যায় মহৎ লোক আসীন থাকতেন, তার অধিনায়ক কতবড় মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তাঁর যুগে ইলমে কালামের কোন উন্নতি হয়নি ৷

সে সময় কালামপন্থী আলিমদের কয়েদখানায় বন্দী করা হয় এবং আদেশ জারি করা হয় যে, কেউ যেন ইলমে কালাম সম্পর্কে কিছু লিখতে না পায়। কিন্তু তখন এমন কতগুলো কারণ দাঁড়ায়, যাতে বাধ্য হয়ে হারুনুর রশিদকে ইলমে কালামের কদর করতেই হয়। লোকদের ইলমে কালাম থেকে যখন প্রতিহত করা হলো এবং এ খবর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লো, তখন সিন্ধুর রাজা সুযোগ বুঝে হারুনুর রশিদেয় নিকট এ মর্মে এক পত্র দিলেন, "মুসলমানেরা তলোয়ারের বলেই ইসলাম প্রচার করেছে। যদি যুক্তিবনে ইসলামকে সত্য বলে প্রমাণিত করা চলে, তবে আপনি কোন একজন আলিমকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারলে আমি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবো।”

পঞ্চম শতকে ইলমে কালাম

পঞ্চম শতকে বিভিন্ন কারণ বশতঃ ইলমে কালামের পতন শুরু হয়। তা সত্ত্বেও এ সময় কতক উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মুতাকাল্লিমের আবির্ভাব ঘটে। তন্মধ্যে আবুল হোসাইন মোহাম্মদ ইবনে আলী আল-বসরী, আবু ইসহাক ইসফারাইনী, কাষী আবদুল জাব্বার মুতাযিলী ছিলেন বিশেষ প্রখ্যাত। ইবনে খাল্লিকান বলেন, ইমাম রাখীর 'আল মাহসূল' নামক গ্রন্থটি আবুল হোসাইন বসরী রচিত 'মু'তামাদ' নামক গ্রন্থেরই সারমর্ম। এতে সহজেই অনুমিত হয় যে, তিনি কত বড় মর্যাদার লোক ছিলেন। ইবনে খাল্লিকান তাঁর সম্পর্কে বলেনঃ "তাঁর মুক্তি খুবই সুন্দর। তিনি ছিলেন সে সময়ের ইমাম।

লোকের। তাঁর রচনায় খুবই উপকৃত হয়।" তাঁর আরো গ্রন্থ আছে। তন্মধ্যে 'তাসাফ্লুহুল আদিল্লাহ' দূখণ্ড বিশিষ্ট। 'গুরুরুল আদিল্লাহ্' একটি বৃহদাকার গ্রন্থ। আবুল হোসাইন হিজরী ৪২৬ সালে পরলোক-গমন করেন। হানাফী মতাবলম্বী প্রখ্যাত ফকিহ কাষী যমিরী তাঁর জানাযার নামায পড়ান।


শেয়ার করুন