pdf islami ইসলামের জীবন পদ্ধতি islamer jibon poddhoti

book cover ইসলামের জীবন পদ্ধতি
ইসলামের জীবন পদ্ধতি সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী
প্রকাশনীঃ আধুনিক প্রকাশনী
বইয়ের সাইজঃ ১-এমবি
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪৮
বইয়ের ফরম্যাট পিডিএফ ই-বুক
বিভাগঃ ইসলামী জীবন ব্যবস্থা
কৃতজ্ঞতায়ঃ বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার

মানুষের প্রকৃতিতে চরিত্রের অনুভূতি একটা স্বাভাবিক অনুভূতি। এটা এক প্রকারের গুণ ও কাজকে পসন্দ করে এবং আর এক প্রকারের গুণ ও কাজকে করে অপসন্দ। এ অনুভূতি ব্যক্তিগতভাবে মানুষের মধ্যে কমও হতে পারে, বেশীও হতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে মানবতার তীব্র চেতনা চরিত্রের কোনো কোনো গুণকে ভাল এবং কোনো কোনো গুণকে মন্দ বলে চিরদিন একইরূপে অভিহিত করেছে। সততা, সুবিচার, ওয়াদাপূর্ণ করা এবং বিশ্বাসপরায়ণতাকে চিরদিন মানব চরিত্রের প্রশংসনীয় গুণ বলে মনে করা হয়েছে। মিথ্যা, যুলুম, প্রতিশ্রুতি ভংগ করা ও বিশ্বাসঘাতকতাকে মানবেতিহাসের কোনো যুগেই পসন্দ করা হয়নি। সহানুভূতি, দয়া, দানশীলতা এবং উদারতাকে চিরদিনই সম্মান করা হয়েছে।

পক্ষান্তরে স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, কৃপণতা ও সংকীর্ণ দৃষ্টিকে কোনো দিনই মর্যাদা দান করা হয়নি। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা ও আদর্শ পরায়ণতা এবং বীরত্ব ও উচ্চ আশা চিরদিনই শ্রদ্ধা পাবার উপযুক্ত গুণ হিসেবে গণ্য হয়েছে। পক্ষান্তরে অস্থিরতা, নীচতা, খোশামোদী, হীন মনোবৃত্তি ও কাপুরুষতাকে কোনো দিনই অভিনন্দিত ক করা হয়নি। আত্মসংযম, আত্মসম্মান, জ্ঞান, নিয়মানুবর্তিতা ও অকপট মেলামেশাকে চিরদিনই মানুষের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং প্রবৃত্তির গোলামী, অশালীন আচরণ, সংকীর্ণতা, বে-আদবী ও কুটিল মনোবৃত্তি মানব চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের তালিকায় কোনো দিনই স্থান পায়নি। কর্তব্যপরায়ণতা, প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা, কর্মপটুতা এবং দায়িত্ববোধ চিরদিনই সম্মান পেয়ে এসেছে। কিন্তু কর্তব্য সম্পর্কে উদাসীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী ও কর্মবিমুখ মানুষকে কোনোদিনই সুনজরে দেখা হয়নি। এভাবে সমাজ জীবনের ভাল ও মন্দ গুণাবলী সম্পর্কেও মানবতার সিদ্ধান্ত চিরকাল প্রায় একই প্রকারের রয়েছে।

সৎকাজের প্রেরণা

বিশ্ব প্রকৃতি ও মানব সম্পর্কে ইসলামের এ ধারণা মানব হৃদয়ে এমন এক দুর্নিবার আবেগ সৃষ্টি করে যা চারিত্রিক আইন-কানুন পালন করার জন্য মানুষকে নিরন্তর অনুপ্রাণিত করতে থাকে। মানুষ যখন নিজ ইচ্ছাতেই আল্লাহকে আল্লাহ বলে এবং তাঁর দাসত্ব করাকে জীবনের একমাত্র পথ বলে স্বীকার করে আর আল্লাহ তায়ালার সন্তোষ লাভ করাকেই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে তখনই সে নিজে অন্তরের আবেদনেই আল্লাহ তায়ালার হুকুম-আহকাম ও বিধি-নিষেধগুলো পালন করবে। এই সাথে পরকাল বিশ্বাসও একটা উদ্বোধক শক্তি। কারণ সে নিসন্দেহে বিশ্বাস করে যে, যে ব্যক্তিই আল্লাহ তায়ালার হুকুম-আহকাম অনুসরণ করবে, দুনিয়ার এ অস্থায়ী জীবনে তাকে যতই দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে এবং অভাব-অভিযোগ ও নির্যাতন-নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হোক না কেন। পরকালে তার চিরস্থায়ী জীবনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত লাভ সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হবে, দুনিয়ায় এ সংক্ষিপ্ত জীবনে সে যতই আনন্দ স্ফূর্তি ও আয়েশ-আরাম লাভ করুক না কেন পরকালে তাকে চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে হবে, তাতে সন্দেহ নেই। বস্তুত এ আশা, এ ভয় এবং বিশ্বাস কোনো মানুষের মনে যদি বদ্ধমূল হতে পারে, তবে তার অন্তর্নিহিত এ বিরাট উদ্বোধক শক্তি তাকে এমন সব স্থানে পুণ্যের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারে যেখানে পুণ্যের পার্থিব ফল মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে এবং এমন সময়ও তাকে পাপ ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখতে পারে, যখন এ পাপের কাজ খুবই লাভজনক ও লোভনীয় হয়ে দাঁড়াবে।

ভাল-মন্দের পরিচয়

এর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য এই যে, এটা শুধু অবাস্তব কল্পনার সাহয্যে কতগুলো আশ্চর্য ধরনের চরিত্রনীতি ঠিক করেনি এবং মানুষের সর্ববাদী সমর্থিত চরিত্রনীতির এক অংশের মূল্য কম এবং অপর অংশের মূল্য বেশী দেখাবার চেষ্টাও এটা করেনি। ইসলাম এমন সব জিনিসকে চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা দুনিয়ার সকল মানুষের দ্বারাই সমর্থিত এবং এর কিছুটা অংশ নিয়েই যথেষ্ট মনে করা হয়নি বরং এর সবটুকুকেই সে নিজের নীতি বলে গ্রহণ করেছে। তারপর একটা পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার সাথে মানুষের জীবনে তার একটা স্থান, একটা মর্যাদা এবং একটা সুস্পষ্ট ব্যবহার ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করেছে। ইসলাম এর ব্যাপক চরিত্রনীতিকে মানব জীবনে এমন সামঞ্জস্যের সাথে প্রযুক্ত করেছে যে, ব্যক্তিগত কাজ-কারবার, পারিবারিক সম্পর্ক, নাগরিক জীবন, আভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনৈতিক আদান-প্রদান, ইসলামের জীবন পদ্ধতি

আরও বই ডাউনলোড করুন
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম - মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান pdf ডাউনলোড
কুরআন হাদীসের আলোকে মরণ ব্যাধি দূর্নীতি pdf ডাউনলোড
আপনাদের প্রশ্নের জবাব ১-৩ খন্ড পিডিএফ বই ডাউনলোড ডাউনলোড

বাজার-বন্দর-শিক্ষাগার, আদালত ফৌজদারী, পুলিশ লাইন, সেনানিবাস, যুদ্ধের ময়দান, স্বস্তি পরিষদ- মোটকথা মানব জীবনের প্রত্যেকটি দিক ও বিভাগের উপর ইসলামের ব্যাপক চরিত্রনীতির সুস্পষ্ট প্রভাব বর্তমান। মানব জীবনের প্রত্যেকটি দিক ও বিভাগের উপর ইসলাম স্বীয় চরিত্রনীতিকেই একমাত্র 'শাসক' নিযুক্ত করেছে এবং জীবনের যাবতীয় কাজ-কারবারের চাবিকাঠি প্রবৃত্তি, স্বার্থবাদ এবং সুবিধাবাদের পরিবর্তে, চরিত্রের হাতে ন্যস্ত করাই ইসলামের ঐকান্তিক চেষ্টা।

ইসলামের সমাজব্যবস্থা

দুনিয়ার সমস্ত মানুষ একই বংশোদ্ভূত"-এ মতের উপরই ইসলামী সমাজব্যবস্থার বুনিয়াদ স্থাপিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম একজোড়া মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তারপরে সেই জোড়া হতে দুনিয়ার সকল মানুষের জন্ম হয়েছে। প্রথম দিক দিয়ে একজোড়া মানুষের সন্তানগণ দীর্ঘকাল পর্যন্ত একই দল ও একই সমাজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি একই প্রকারের ছিল; তাদের ভাষাও ছিল এক। কোনো প্রকার বিরোধ-বৈষম্য তাদের মধ্যে ছিল না। কিন্তু তাদের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পেতে লাগল ততই তারা পৃথিবীর নানাদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং এ বিস্তৃতির ফলে তারা অতি স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন বংশ, জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ল। তাদের ভাষা বিভিন্ন হয়ে গেল, পোশাক-পরিচ্ছেদের দিক দিয়ে অনেক বৈষম্য ও বৈচিত্র দেখা দিল।

দৈনন্দিন জীবনযাপনের রীতিনীতিও আলাদা হয়ে গেল এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আবহাওয়ায় তাদের রং, রূপ ও আকার-আকৃতি পর্যন্ত বদলিয়ে গেল। এসব পার্থক্য একেবারেই স্বাভাবিক, বাস্তব দুনিয়ায়ই এটা বর্তমান। কাজেই ইসলামও এসবকে ঠিক একটা বাস্তব ঘটনা হিসেবেই গ্রহণ করেছে। ইসলাম এসবকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবার পক্ষপাতি নয়, বরং এসবের দ্বারা মানব সমাজে পারস্পরিক পরিচয় লাভ করা যায় বলে ইসলাম এগুলোকে স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু পার্থক্য-বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে মানব সমাজে বর্ণ, বংশ, ভাষা, জাতীয়তা এবং স্বাদেশীকতার যে হিংসা-দ্বেষ উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে, ইসলাম তা কিছুতেই সমর্থন করতে পারে না, এর দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণরূপেই ভুল। মানুষ এবং মানুষের মধ্যে শুধু জন্মের ভিত্তিতে উচ্চ-নীচ, আশরাফ-আতরাফ এবং আপন-পরের যে পার্থক্য করা হয়েছে, ইসলামের দৃষ্টিতে তা একেবারেই জাহেলিয়াত, একেবারেই মূর্খতাব্যঞ্জক। ইসলাম সমস্ত দুনিয়ার মানুষকে সম্বোধন করে বলে যে, তোমরা সকলেই এক মাতা ও এক পিতার সন্তান, তোমরা পরস্পর ভাই ভাই এবং মানুষ হওয়ার দিক দিয়ে তোমরা সকলেই সমান।


শেয়ার করুন