ইসলামে সামাজিক সুবিচার - islame shamajik subicher pdf

ইসলামে সামাজিক সুবিচার - সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ pdf book
book cover islame shamajilk subiicher pdf
ইসলামে সামাজিক সুবিচার সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ
প্রকাশনীঃ এএইচপি প্রকাশনী
বইয়ের সাইজঃ ৮-এমবি
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫১৬
বইয়ের ফরম্যাট পিডিএফ ই-বুক
বিভাগঃ ইসলামী আদর্শ
কৃতজ্ঞতায়ঃ বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার

ইসলামে সামাজিক সুবিচারের গতি প্রকৃতি ইসলামের সামাজিক সুবিচার সম্পর্কে আমরা সঠিক জ্ঞান ও পরিচয় তখনই লাভ করেেত পারবো যখন তাওহীদ সৃষ্টি জগত, জীবন ও মানুষ সম্পর্কে ইসলামী ধ্যান-ধারণা ও চিন্তাধারার মোটামুটি জ্ঞান ও বুঝ আমাদের লাভ হবে। কারণ সামাজিক সুবিচারের ইসলামী দর্শন সেই মৌলিক নীতি ও বুনিয়াদী চিন্তাধারারই একটি শাখা মাত্র; যা হলো ইসলামের সমুদয় শিক্ষা ও তালিমের মূল কেন্দ্রস্থল।

যেহেতু পূর্ণমানব জীবনটাকে একটি নবরূপে নবছাঁচে ঢালাই করে সংগঠন করার কাজই হলো ইসলামের মূল কর্মসূচী। এ জন্যই তার সমুদয় সংস্কার মূলক কর্মসূচী যেমন আলমারীর তাকের উপর রেখে দেয়া হয়নি, তেমনি সে প্রত্যেকটি উদ্ভাবিত সমস্যার জন্য স্বতন্ত্র রূপে আলাদা কোন নীতিমালা ও সমাধানও দেয়নি। তার নিকট রয়েছে তাওহীদ সৃষ্টি জগত জীবন ও মানুষ সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ দর্শন ও ধ্যান-ধারণা। তার সমগ্র শাখা-প্রশাখা ও আনুষঙ্গিক নীতিমালা তার দর্শন ও ধ্যান-ধারণা থেকেই জন্ম লাভ করেছে। তার দর্শন আইন-কানুন বিধান, তার নির্ধারিত সীমারেখা এবং ইবাদাত-উপসনা এবং পারস্পরিক লেন-দেন আদান-প্রদান সম্পর্কীয় নীতিমালার সবই এ মূলনীতির সাথে গভীর সম্পর্কে বিজড়িত। আর এহেন পূর্ণাঙ্গ চিন্তাধারার আলোকেই তার বাস্তব কর্মসূচী প্রণীত হয়। প্রত্যেকটি উদ্ভাবিত নতুন অবস্থার জন্য এমন একটি নতুন ও স্বাধীন কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয় যা অন্যান্য ব্যাপারে গৃহীত কর্মসূচীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না। অথবা প্রত্যেক সমস্যার জন্য স্বতন্ত্র সমাধান অনুসন্ধান করার ও নীতি ইসলামী গতি প্রকৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ইসলামে সামাজিক সুবিচারের মূলভিত্তি

ইসলামের সামাজিক ইন্সাফের প্রকৃতি ও স্বরূপ সম্পর্কে বিগত অধ্যায় ইতিপূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে। তা একটি লৌহ কঠিন সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে। তাকে সংক্ষিপ্ত দাওয়াত ও অস্পৃষ্ট বস্তু রূপে না রেখে তার পরিবর্তে সে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলী অর্জনের নিমিত্ত নির্দিষ্টতম উপাদান ও উপকরণের সংস্থান করে দেয়। ইস্লাম হলো একটি বাস্তবধর্মী জীবন বিধান। তা এমন ধর্ম নয় যে, ধ্যানের জগতে ওয়াজ নছীহত ও তালীম তালকীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

আমরা মোটামুটিভাবে এ কথাগুলো পাঠকবর্গের সামনে উপস্থি করেছি যে, সৃষ্টি জগত জীবন ও মানুষ সম্পর্কে ইস্লামের একটি মৌলিক চিন্তাধারা ও বুনিয়াদী দর্শন বিদ্যমান আছে। আর সামাজিক ইন্সাফের ধ্যান-ধারণা ও রূপরেখা হলো সেই মৌলিক চিন্তাধারা ও বুনিয়াদী দর্শনেরই একটি বাস্তব আলোকরশ্মি ও প্রতিবিম্ব। এ দর্শন ইস্লামী ইন্সাফকে এমন একটি উদারময় ও সার্বজনীন মানবিক ইন্সাফের রূপ দিয়ে পেশ করে, যা বস্তুজগতের বিষয়াবলী ও অর্থনৈতিক সমস্যা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। তার কাছে জীবনের মৌলিক মূল্যবোধ একই সময় বস্তুজগত আধ্যাত্মিক জগত উভয়ের ভিতর নিহিত। এর ভিতর পার্থক্যের রেখা অঙ্কিত করা ঠিক নয়। মানবতা এমন একটি পূর্ণাঙ্গ একাত্ব রূপ, যার বিভিন্ন উপাদান পরস্পর বিজড়িত ও সম্বন্ধযুক্ত এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দানে একে অপরের অংশীদার। এটা পরস্পর সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণকারী বিভিন্ন দল ও সম্প্রদায়ের সমষ্টি নয়। মাঝে মাঝে অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় যে, আসল ব্যাপারটি ইস্লামের এ মৌলিক চিন্তাধারার পরিপন্থী।

আত্মার মুক্তি

সামাজিক ধ্যান-ধারণার কোনরূপ ব্যাখ্যা এবং তার প্রতিষ্ঠা ও স্থায়ীত্বের চিন্তা করা ঐ সময় পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ না তার পিছনে এ ইন্সাফের সামাজিক প্রয়োজন প্রকটভাবে অনুভূত এবং ব্যক্তির অধিকারের গভীর জ্ঞান অনুভূতি বর্তমান না থাকবে। অতঃপর এমনি রূপেই যে একটি মানবিক উচ্চ আশা-আকাঙ্খার ও মহান উদ্দেশ্যের দ্বারদেশে উপনীতি হওয়া সম্ভব হতে পারে, সে বিশ্বাস ও প্রত্যয় থাকাও একান্ত অপরিহার্য। সাথে সাথে জাগতিক পরিবেশ ও অবস্থা এমনতর হতে হবে যেন, ব্যক্তি এ ইনসাফের ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্ক যুক্ত হতে এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ ও তার জন্য সর্বপ্রকার দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নেয়ার জন্য সামনে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে। ব্যক্তির মধ্যে যদি তার প্রয়োজনের বাস্তব অনুভূতি না থাকে এবং যদি সে এ অনুভূতিকে সতেজ সাবলীল রাখার জন্য বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ না করে, তবে শুধু কেবল আইনের আবেষ্টনী দ্বারা এহেন ইন্‌স্সাফ ও সুবিচার কায়েম করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ আইন-কানুন যদি বাস্তবে রূপায়িতও হয়, তবে সমাজ তাকে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত রাখতে সক্ষম হয় না। ব্যক্তির মনোজগতে এমন বিশ্বাস ও প্রত্যয় বর্তমান থাকা প্রয়োজন, যা সামাজিক ইন্সাফ প্রতিষ্ঠায় সাহায্যকারীর ভূমিকা নিতে পারে। অনুরূপ তার বর্হিজগতের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমনতর হতে হবে, যেন তাকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হয়।

আরও বই ডাউনলোড করুন
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম - মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান pdf ডাউনলোড
মুক্তির পয়গাম Islami Book Free Download ডাউনলোড
আল কুরআনে অর্থনীতি pdf download ডাউনলোড

ইসলামে মানবিক সাম্য

ইতিপূর্বের আলোচনা দ্বারা আমরা সত্যিকারের সাম্যের মৌলিক উপাদানাবলী এক এক করে গুণে একত্র করেছি। এখন মানুষের আত্ম চেতনাবোধ ও দাসত্ব মনোবৃত্তির মিশ্র দ্রব্যের কবল থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মানুষ দারিদ্রতার অভিশাপ দুঃখ-কষ্ট অপমান এবং মৃত্যুর সংশয় থেকে এ ধারণা-জ্ঞান নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে কোন কাজই আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া হয় না। সে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের শক্তি সমূহের নির্যাতনের যাতাকলের নিষ্পেষণ থেকে যেমন বেড়িয়ে এসেছে, তেমনি মানুষের দুয়ারে ভিক্ষার হাত সম্প্রসারিত করার অপমানজনক কাজ থেকে ও নিষ্কৃতি লাভকরেছে। সে স্বীয় মানবিক বৃত্তিনিচয়ের বেড়াজাল ছিন্ন করে সেই মহান একত্ববাদের দাবিদার এক মাত্র স্রষ্টার পানে মনোনিবেশ করেছে- যার পানে দাস মনিব সবই মাথাবনত করে। এ সব বিষয়ের ক্রমানুমিক পর্যায় প্রতিটি দিকের এবং জীবনের আবশ্যকীয় উপকরণ প্রত্যেক ব্যক্তির আয়ত্তাধীনে এসেছে এবং সত্যিকার সাম্যবাদের মৌলিক উপাদানাবলী সংগ্রহ হয়ে সাম্যবাদ যখন মানুষের দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরার ও ধমনির সাথে মিশ্রিত হয়ে গিয়েছে, তখন আর মানব আত্মার সাম্যবাদের আওয়াজ বুলন্দ করার প্রয়োজন করে না ৷


শেয়ার করুন