
ইসলাম মানবতার ধর্ম | ডাঃ মুস্তাফা আস সাবায়ী |
---|---|
প্রকাশনী | ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র |
ভার্চুয়াল সাইজ | ১ এমবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ১৯ পৃষ্ঠা |
বইয়ের ফরম্যাট | পিডিএফ ই-বুক |
বিভাগ | ইসলামী আদর্শ |
কৃতজ্ঞতা | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
যারা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ইসলামী সভ্যতা ও তার আনুষঙ্গিক প্রভাব-প্রতিক্রিয়। লক্ষ্য করবেন তাঁরা অবশ্যই স্বীকার করবেন যে, ইসলামী সভ্যতার শিরা-উপশিরায় মানবতার প্রবল স্রোতধারা যেভাবে সঞ্চালিত তাতে তা বিশ্বের যাবতীয় সভ্যতার শীর্ষে স্থান পাবার যোগ্য। প্রকৃত-পক্ষে মানবতাই হচ্ছে ইসলামী সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই বৈশি-ষ্ট্যের প্রভাবেই ইসলাম মানবজাতিকে দলাদলি, রেষারেষি ও পক্ষ-পাতিত্বের সংকীর্ণ' পরিবেশ ও বর্ণ বৈষ্যমের ঘিঞ্জিগলি থেকে এমন এক মুক্ত পরিবেশে নিয়ে আসে যেখানে আছে শুধু, শালীনতা ও বন্ধুত্বের প্রাণমাতানো সমীরণ, আর প্রেমপ্রীতি ও ভালবাসার সুমধুর সুরলহরী-যেখানে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির উপর, এক গোত্র অপর গোত্রের উপর, একদল অপর দলের উপর কিংবা একজাতি অন্য জাতির উপর জুলুম-অত্যাচারের কোন সুযোগই পায় না। ইসলামের এই অনুপম বৈশিষ্ট্য শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার সম্মুখে কিংবা তার ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রেই নয়, বরং সামাজিক আইনকানুন ও শান্তিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ রূপে বিদ্যমান। ইসলামী সভ্যতার প্রতিটি বিভাগ ও প্রতিটি স্তর এই বৈশিষ্ট্যের মহিমায় মহিমান্বিত। ইসলামের সত্যিকার অনুসারিদের কর্ম'জীবন তো এই বৈশিষ্ট্যের এক একটি বাস্তব উদাহরণ ছাড়া কিছু নয় ।
দুর্নীতির উপসর্গ ও তার সৃষ্টিকর্তা
ইসলামী সভ্যতায় মানবতার প্রভাব সর্বপ্রথম নজরে পড়ে তখন যখন দেখা যায় সে গোটা মানবজাতিকে একই পিতার সন্তান বলে ঘোষণা করেছে। কুরআন বলেঃ হে মানবজাতি, তোমাদের প্রভুকে ভয় ক'রে চল। তিনি তোমা-দের একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার সহ-ধর্মিণীকেও সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ঐ একই স্বামী-স্ত্রী হতে তিনি অসংখ্য নর-নারীর বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন।
অর্থাৎ মানুষ মাত্রেই একই বংশের অন্তর্গত। তাদের মধ্যে জাতি-গত যে পার্থক্য রয়েছে তা মোটেই লক্ষণীয় বিষয় নয়। কেননা এই পার্থক্য একই ঔরসজাত সন্তানের পার্থক্যের সমান। মানুষ শাখা-প্রশাখায় ভিন্ন ভিন্ন হলেও মূল তাদের একই। গোটা মানবজাতি যখন একই বংশোদ্ভূত তখন তাদের মধ্যে পরস্পর স্নেহ, ভালবাস। সাহায্য-সহায়তা ও উপকার সাধনের প্রবল আগ্রহ থাকাটা একান্ত বাঞ্ছনীয়। অতঃপর ইসলাম এক অভিনব পদ্ধতিতে মানবতার আর দিক বিশেষভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। এই বিশেষ দিকটির প্রতি জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে কুরআন ঘোষণা করছে: হে মানবজাতি আমি তোমাদের একই স্ত্রীলোক ও একই পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি। আর পরস্পর পরিচয় লাভের জন্যই আমি তোমাদের মধ্যে বংশ ও গোত্রের প্রবর্ত'ন করেছি।
রিয়াদুস সালেহীন সকল খন্ড PDF Download | ডাউনলোড |
---|---|
রুবাইয়াত-ই হাফিজ পিডিএফ ডাউনলোড | ডাউনলোড |
কুরআন হাদীসের আলোকে মরণ ব্যাধি দূর্নীতি pdf | ডাউনলোড |
ইসলাম: মানবতার ধর্ম
হে মানবজাতি আমি তোমাদের একই স্ত্রীলোক ও একই পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি। আর পরস্পর পরিচয় লাভের জন্যই আমি তোমাদের মধ্যে বংশ ও গোত্রের প্রবর্ত'ন করেছি। অতঃপর ইসলাম মানব জীবনের আর একটি বিশেষ অবস্থার দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর তা হলো, এই জীবন সংগ্রামে কেউ জয়ী হয়, কাউকে আবার পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে হয়। কেউ প্রাচু-যে'র মধ্যে থাকে, কারো আবার অন্ন-বস্ত্রেরই সংস্থান হয় না। কেউ শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয়, কাউকে আবার বাধ্যতামূলকভাবে অন্যের বশ্যতা স্বীকার করতে হয়। কারো গায়ের রং কালো, কারো সাদা, কারো হলদে, কারো বা অন্য কিছু।
ইসলামের মতে, মানব জীবনে এই সমস্ত পার্থক্য থাকাটা একান্ত স্বাভাবিক। পার্থিব জীবনের সাথে এই সমস্ত বৈপরীত্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, য। উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত কিংবা শক্তি-সামর্থ্য ও শাসন ক্ষমতার অধিকারী, তা তাদের পার্থিব মযার্দা বা ক্ষমতাবলে ক্ষমতাহীন কিংবা শাসিতদের দন্ডমুন্ডের মালেক হয়ে বসবে। এর অর্থ এইও নয় যে, শেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের দেখলে নাক সিটকাবে। প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ এই যে, খোদার দৃষ্টিতে সকল মানুষই সমমর্যাদার অধিকারী। তবে হ্যাঁ, সততা ও খোদাভীতির তারতম্য অনুসারে তাদের মর্যাদারও তারতম্য ঘটতে পারে। কুরআন বলে:-
নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে। সবচেয়ে বেশী সম্মানিত যে অর্থাৎ আইনের চোখে সবাই সমান। একমাত্র সততার ভিত্তিতেই মানুষের মধ্যে তারতম্যের সৃষ্টি হতে পারে। সমাজের প্রত্যেক লোকই সমমর্যাদার অধিকারী। অতএব সবল দুর্বলকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতে পারে না-এবং কিছুসংখ্যক লোককে দুঃখ-সাগরে ভাসিয়ে বাকী লোক আমোদ-স্ফূর্তিতে ডুবে থাকতে পারে না।
রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
পরস্পর ভালবাসা ও সহানুভূতির দিক দিয়ে মুসলমানরা যেন একই দেহের বিভিন্ন অংশ। যখন এই দেহের কোন একটি অংশে আঘাত লাগে, তখন গোটা দেহেই ছড়িয়ে পড়ে তার প্রতিক্রিয়া-প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতনায় ছটফট করতে থাকে। শুধুমাত্র উপরোক্ত কথাগুলোই নয় বরং কুরআন-হাদীসে এমন আরে। অনেক কথা আছে যা মানবজাতির সমজাতীয়ত। ও সমগোত্রীয়-তার এক একটি অকাট্য দলিল। কুরআন মানবজাতিকে 'হে নবী আদম', 'হে মানব জাতি' শব্দ দ্বারা সম্মোধন করেছে। আর যখন ইসলামপন্থীদের স করার আবশ্যক বোধ করছে তখন 'হে মুসলিমগণ' বা এই জাতা, শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে। 'হে পরাক্রমশালী মানবগোষ্ঠি' বা 'হে শ্বেতাঙ্গ মুমিনগণ'-এজাতীয় শব্দের কোন সম্বোধন কুরআন-হাদীসের কোথাও নেই। সমগ্র মানবজাতি হোক কিংবা কোন একটি বিশেষ ধর্মে'র অনুসারীই হোক-সকলকেই একই সমতলে দাঁড় করিয়েছে।