pdf ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ islamer dristite jonmo niyontron - মওদূদী

islamer dristite jonmo niyontron
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী
প্রকাশনীঃ আধুনিক প্রকাশনী
বইয়ের সাইজঃ ২-এমবি
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৪৩
বইয়ের ফরম্যাট পিডিএফ ই-বুক
বিভাগঃ পারিবারিক জীবন
কৃতজ্ঞতায়ঃ বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার

জন্মনিরোধের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বংশ বৃদ্ধির প্রতিরোধ। প্রাচীনকালে এতদুদ্দেশ্যে আজল, গর্ভপাত, শিশুহত্যা ও ব্রহ্মচর্য (অবিবাহিত থাকা অথবা স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন পরিহার করা) অবলম্বন করা হতো। আজকাল শেষের দুটি ব্যবস্থা পরিত্যাগ করা হয়েছে এবং এদের পরিবর্তে এমন নয়া পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে, যাতে করে যৌন মিলন বহাল রেখে ঔষধ অথবা উপকরণাদির দ্বারা গর্ভসঞ্চারের পথ বন্ধ করে দেয়া যায়। ইউরোপ ও আমেরিকায় গর্ভপাতের ব্যবস্থা এখনও প্রচলিত আছে। কিন্তু জন্মনিরোধ আন্দোলন শুধু গর্ভ সঞ্চার বন্ধ কারার প্রতিই গুরুত্ব আরোপ করে। এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ বিষয়-সম্পর্কিত তথ্যাবলী ও উপায়-উপাদান ব্যাপক হারে সমাজে ছড়ানো, যেন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী এর সুবিধা ভোগ করতে পারে।

আন্দোলনের সূচনা

ইউরোপে ঈসায়ী আঠারো শতকের শেষাংশে এ আন্দোলনের সূচনা হয়। সম্ভবত ইংলন্ডের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ম্যালথ্যাস-ই (Malthus) এর ভিত্তি রচনা করেন। সে সময় ইংরেজদের প্রাচুর্যময় জীবন যাপনের ফলে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে চলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চ হার দেখে মিঃ ম্যালথ্যাস হিসাব করতে শুরু করেন যে, পৃথিবীর আবাদযোগ্য জমি ও অর্থনৈতিক উপায়-উপাদান সীমিত। কিন্তু বংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা সীমাহীন। যদি স্বাভাবিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যার তুলনায় সংকীর্ণ হয়ে যাবে-অর্থনৈতিক উপকরণাদি, তখন মানুষের ভরণপোষণের তার বইতে পারবে না এবং মানুষের সংখ্যা বেশী হয়ে যাবার ফলে জীবন যাত্রার মান নিম্নগামী হয়ে যাবে।

সূতরাং মানব জাতির স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম, কল্যাণ ও শান্তির জন্যে মানব বংশ বৃদ্ধির হারকে অর্থনৈতিক উপাদান বৃদ্ধির সংগে সংগতি রক্ষা করে চলতে হবে। জনসংখ্যা যেন কখনও অর্থনৈতিক উপাদানের উর্ধ্বে যেতে না পারে। মোটামুটি এ-ই হচ্ছে ম্যাসখ্যাসের প্রস্তাব। এতদুদ্দেশ্যে তিনি ব্রহ্মচর্যের প্রাচীন প্রথাকে পূনর্জীবিত করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থাৎ তাঁর মতে অধিক বয়সে বিয়ে করতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনে যথেষ্ট সংযম অবলম্বন করতে হবে। ১৭৯৮ সালে মিঃ ম্যালথ্যাস জনসংখ্যা ও সমাজের ভবিষ্যত উন্নয়নে এর প্রভাব (An Essay on Population and as it effects, the future Improvement of the Society) নামক পুস্তকে সর্বপ্রথম এ মতবাদ প্রচার করেন। এরপর ফ্রান্সিস প্ল্যাস (Francis Place) ফরাসী দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করার প্রতি জোর দেন।p কিন্তু তিনি নৈতিক উপায় বাদ দিয়ে ঔষধ ও যন্ত্রাদির সাহায্যে গর্ভ নিরো প্রস্তাব দেন। ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ

নারীদের অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা

উপরোল্লিখিত অবস্থাগুলোর দরুন নারীদেরও নিজ নিজ ব্যয়ভার বহন করতে বাধ্য হতে হয় এবং পরিবারের উপার্জনশীলদের মধ্যে তাদেরও শামিল হতে হয়। সমাজের প্রাচীন প্রথা মুতাবিক পুরুষের উপার্জন করা এবং নারীর গৃহকর্মে নিযুক্ত থাকার কর্মবন্টন ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। নারীগণ অফিস ও কারখানায় চাকরী করার। জন্যে হাজির হয়। আর জীবিকা উপার্জনের দায়িত্ব গ্রহণের পর সন্তান জন্মানো ও তার প্রতিপালনের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। যে নারী নিজের প্রয়োজন পূরণ ও ঘরের বাজেটে নিজের অংশ দান করতে বাধ্য হয় তার পক্ষে সন্তান জন্মানো কি করে সম্ভব? অনেক নারীই গর্ভাবস্থায় ঘরের বাইরে দৈহিক বা মানসিক শ্রম করার অযোগ্য হয়ে যায়, বিশেষত গর্ভকালের শেষাংশে তো ছুটি গ্রহণ তার জন্যে অপরিহার্য। পুনঃসন্তান প্রসবকালে ও তার পরবর্তী কিছুদিন সে কাজ-কর্ম করার যোগ্য থাকে না। তারপর শিশুকে দুধ পান করানো এবং অন্তত তিন বছর পর্যন্ত তার প্রতিপালন, দেখাশোনা, শিক্ষা দানের কাজ চাকরীর অবস্থায়

জন্ম নিয়ন্ত্রণের কুফল

বিগত ১০০ বছরের অভিজ্ঞতায় জন্মনিয়ন্ত্রণের যেসব ফলাফল দেখা দিয়েছে তাও আলোচনা করা দরকার। যে আন্দোলন বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে দ্রুতগতিতে প্রসার লাভ করেছে এবং যার ফলাফল বরাবর অভিজ্ঞতায় ধরা পড়েছে তার ভাল-মন্দ সম্পর্কে মতামত গঠন করার জন্যে একশত বছরের অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। জন্মনিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলোর মধ্যে ইংলণ্ড ও আমেরিকাকে আদর্শ দেশ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। কেননা, আমাদের নিকট অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দু'দেশে সমৃদ্ধি ও তথ্য অনেক বেশী পরিমাণে আছে। আর অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ দু'দেশের পার্থক্যও খুব বেশী নয়।

বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যস্থিত ভারসাম্য নষ্ট

ইংলণ্ডের রেজিষ্টার জেনারেলের রিপোর্ট, ন্যাশনাল বার্থ কন্ট্রোল কমিশনের অনুসন্ধান এবং জনসংখ্যা সম্পর্কিত রয়েল কমিশনের রিপোর্ট দেখে জানা যায় যে, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সব চাইতে বেশী প্রচলিত। বেশীর ভাগই উচ্চ বেতন ভোগী কর্মচারী, উচ্চ শিক্ষিত ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত সচ্ছল লোক এবং ধনী, শাসক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিগণই জন্মনিরোধ অভ্যাস করে থাকে। আর নিম্ন শ্রেণীর মজুর ও শ্রম পেশা লোকদের মধ্যে জন্মনিরোধ প্রথা না থাকারই শামিল। এদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়নি, এদের মনে উচ্চাশাও নেই এবং ধনীদের মত জাঁক-জমকপূর্ণ সামাজিকতার প্রতিও এদের কোন লোভ নেই। এদের সমাজে এখনও পুরুষ উপার্জনকারী এবং নারী গৃহকত্রী।

আরও বই ডাউনলোড করুন
তাফসীরে জালাালাইনের সকল খন্ড একত্রে ডাউনলোড! ডাউনলোড
ইসলামে সামাজিক সুবিচার - islame shamajik subicher pdf ডাউনলোড
চার ইমামের জীবনকথা (char imamer jibonkotha pdf) ডাউনলোড

এ প্রাচীন প্রথাই এখনো এখানে প্রচলিত আছে। আর এ কারণেই এরা আর্থিক অসচ্ছলতা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অগ্নি মূল্য এবং গৃহসমস্যা সত্ত্বেও জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন বোধ করে না। এদের মধ্যে জন্মহার হচ্ছে প্রতি হাজারে ৪০ জন। অপর দিকে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে জন্মহার এত কমে গিয়েছে যে, ইংল্যান্ডের মোট জন্মহার ১৯৫৪ সালে হাজার প্রতি ১৫৫.৩ জন ছিল। কায়িক পরিশ্রমকারীদের পরিবারগুলো বৃহদাকৃতির। সাম্প্রতিক সংখ্যাতত্ত্ব থেকে জানা যায় যে, ১৯০০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে যেসব বিয়ে হয়েছে তার মধ্যে, শ্রমিক পরিবারগুলোর শতকরা ৪০টিই হচ্ছে বড় পরিবার।


শেয়ার করুন