আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম - মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান pdf

আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম - মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান
book adhunik bisser chalange o islam pdf

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে ঠান্ডা যুদ্ধেরও অবসান হয়েছে। সমাজতন্ত্র বা কম্যুনিজম নামক পাশ্চাত্যেরই আরেক মতবাদ যা পৃথিবীর এক বিপুল অংশের জনগোষ্ঠীকে পৌণে এক শতাব্দীকাল শাসন করেছে তাও সমাধিস্থ হয়েছে। ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, দুই দুইটি মহাসমর, আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, পুরাতন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতন ও নানা সংঘাতময় ঘটনাবলীর মধ্যদিয়ে আমরা আজ পৃথিবীর ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ব রাজনীতি পরাশক্তির সংঘাত থেকে নবতর আরেক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতির পন্ডিত ও বিশ্লেষকগণ ইতিমধ্যেই ভবিষ্যৎ বিশ্বের রাজনীতির রূপ কি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। নতুন বিশ্ব রাজনীতিকে কেউ ইতিহাসের সমাপ্তি জাতি-রাষ্ট্রসমূহের ঐতিহ্যগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রত্যাবর্তন, জাতিগত এবং আন্তর্জাতিক সাংঘর্ষিক প্রান্তিকতা থেকে জাতি-রাষ্ট্রের সরে আসার সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

বলা হচ্ছে জাতি-রাষ্ট্র হবে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির প্রধান নায়ক বা চরিত্র। আবার একথাও বলা হচ্ছে যে, জাতি রাষ্ট্রের ভূমিকা অব্যাহত থাকলেও বিজ্ঞান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির কারণে আমরা মূলতঃ সীমানাহীন পৃথিবীর অধিবাসী। পৃথিবীতে আজ প্রায় দুই শতাধিক জাতি-রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক ইউনিট রয়েছে। ১৮৯টি রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য। বর্তমান বিশ্ব মানচিত্রের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই জাতি-রাষ্ট্র সমূহের অস্তিত্ব ও অবস্থান। বিশ্ব রাজনীতি এই জাতি-রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে।

বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র অর্জনকে আধুনিক বিশ্বের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও অগ্রগতি, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও দারিদ্র মুকাবিলা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা, অস্ত্র সীমিতকরণ, উত্তেজনা প্রশমন, পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধকরণ, সম্পদের বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রধান প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসাবে গণ্য।

মুসলমানদের শক্তির উৎস

কুরআন মজিদ মুসলমানদের উন্নতি, তাদের শক্তি বৃদ্ধি, তাদের শক্তি ও কর্তৃত্ব লাভ এবং অন্য সকল জাতির উপর বিজয়ী হবার জন্য শুধু ঈমান ও সৎ কর্মকেই একমাত্র উপায় বলে ঘোষণা করেছে। আজকের দুনিয়ায় যে জিনিসগুলোকে উন্নতির হেতু বলে গণ্য করা হয় তার অভাবকে। কোথাও পতনের হেতু বলে উল্লেখ করা হয়নি। ঈমান ও সৎ কর্মের অধিকারীদের আল্লাহ দুনিয়ায় খিলাফত দান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। অবশ্য এর অর্থ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-কলা ও বস্তুগত উন্নতির অন্যবিধ উপায়-উপকরণের গুরুত্ব না দেয়া নয়। বরং ঈমানী শক্তির পাশাপাশি মুসলিম জাহানকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তির শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনকে যেসব বিষয় অগ্রাধিকার দিতে হবে এটি তাদের মধ্যে অন্যতম। মনে রাখতে হবে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় মুসলমানরা যখন পিছিয়ে পড়ে তখন থেকেই বিশ্ব নেতৃত্ব তাদের হাত ছাড়া হয়ে যায়।

পাশ্চাত্য বিরোধী জোট

মুসলিম বিশ্বের জনগণ পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। উপসাগরীয় যুদ্ধে এটা প্রমাণিত হয়েছে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও বিশেষ করে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার ঘটনাবলীর পর মুসলিম জাহান বিক্ষুব্ধ অগ্নিগিরিতে পরিণত হয়েছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও প্রাচ্যের অন্যান্য অমুসলিম দেশের জনগণও মূলতঃ পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। চীনের ভূমিকা আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে ধরে নেয়া যায়। চীনের সাথে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে আশাব্যঞ্জক। এই মৈত্রীকে আরও সৃদৃঢ় করতে হবে। পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি অর্জন করেছে। ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সৌদি আরব, আলজিরিয়া, মিশরসহ যেসব মুসলিম দেশ পারমাণবিক শক্তি অর্জনে আকাংখী তাদের প্রয়াসকে আরও জোরদার করতে হবে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াও এ সামর্থ অর্জনে সফল হতে পারে। পাশ্চাত্যের মোকাবিলায় কনফুসিয়ান-ইসলামিক জোট খুবই কার্যকর হতে পারে বলে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরাও বিশ্বাস করেন। ইতোমধ্যে পাশ্চাত্য এ অভিযোগ করছে।

বিদেশ নির্ভরতা পরিহার

মুসলিম দেশগুলোকে যত শীঘ্র সম্ভব বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। পশ্চিমা ঋণদাতা দেশসমূহ এবং বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের শর্তাধীন ঋণ গ্রহণের ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ জন্য মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিনিময় ও বিনিয়োগ কর্মসূচী গ্রহণ করা একান্ত জরুরী।
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম আমেরিকা নিজেই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ঋণগ্রস্ত দেশ। আমেরিকার বর্তমান বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তার ঘাটতি অর্থনীতিকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা অত সহজ নয়। তেল সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলোর উচিত হবে ক্রমান্বয়ে তাদের ব্যাংক আমানত পশ্চিমা দেশগুলো থেকে স্থানান্তর করা। পশ্চিমা এনজিওসমূহ দরিদ্র মুসলিম দেশে যে অবাধ বিচরণ করছে তার মোকাবিলায় মুসলিম দেশগুলোর সাহায্য ও সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ এবং মানুষে মানুষে ধন বৈষম্য ও সম্পদ বৈষম্য দূর করতে হবে।


শেয়ার করুন