
ইসলামে শ্রমিকের অধিকার | ফরীদ উদ্দীন মাসউদ |
---|---|
প্রকাশনীঃ | ইসলামিক ফাউন্ডেশন |
বইয়ের সাইজঃ | ২-এমবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ১৪৮ |
বইয়ের ফরম্যাট | পিডিএফ ই-বুক |
বিভাগঃ | ইসলামী আদর্শ |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
পুঁজিবাদ ও আধুনিক শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব
ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে ইউরোপে যে চেতনা জাগে, ক্রুসেড যুদ্ধের মাধ্যমে উন্নততর সভ্যতার অধিকারী মুসলমানদের সঙ্গে মেলা-মেশার কারণে যে আত্মসম্প্রমবোধ জাগে তা সেখানকার সমস্ত পুরনো মূল্যবোধকে লন্ডভণ্ড করে দেয়। তারা অকস্মাৎ যেন এক নূতন দিগন্তের সন্ধান পায়। ধর্মীয় পোপকদের যাঁতাকলে এতদিন তাদের যে অভ্যন্তরীণ সম্ভাবনা সমূহ গুমরে মরছিল তা' সহসাই যেন বিকশিত হয়ে ওঠে। সমস্ত বাঁধ তাদের ভেঙ্গে যায়-নব নব আবিষ্কারে তারা মেতে ওঠে।
এরই ফলশ্রুতিতে অষ্টাদশ শতকের শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে সেখানে এক অভূতপূর্ব সামাজিক রূপান্তর সংঘটিত হয়। নূতন নূতন শিল্প ও কলকারখানা আবিষ্কারের ফলে শিল্প উৎপাদনের উপকরণগুলির মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। গোষ্ঠী ও সংঘভিত্তিক সব রকমের শিল্পা-শ্রমগুলি রুমে ভেঙ্গে পড়তে থাকে। গৃহ ও কুটীরশিল্পগুলি মিল ও কারখানার উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে বিলীন হয়ে যেতে থাকে। আর বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলি এসবের জায়গা দখল করে নিতে শুরু করে। দরিদ্র কুটীর শিল্পীদের হাতে বড় ধরনের ব্যবসা করার প্রয়োজনীয় পাঁজি না থাকায় তারা অসহায় হয়ে পড়ে। আর অন্যদিকে বড় বড় ব্যাসায়ীদের সমন্বয়ে বুর্জোয়া পাঁজিপতি গোষ্ঠীর জন্ম হয়।
শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবে মনীষিগণের প্রচেষ্টা
শ্রমিকদের প্রতি শিল্পপতিদের অন্যায়-আচরণ অতি সুস্পষ্ট। ইউরোপীয় শিল্প জীবনে এই অন্যায় পাঁজিবাদী ব্যবস্থা এক দুষ্ট বিষ-ক্ষতের মত বিরাজ করতে থাকে এবং তা একটি প্রধানতম সামাজিক সমস্যারূপে দেখা দেয়।
শ্রমিকদিগকে এহেন দুরবস্থা থেকে মুক্তি দানের জন্য, তাদের অবস্থা উন্নয়নের ব্রত নিয়ে এই সময় নানা মনীষী স্ব স্ব ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী প্রচেষ্টায় তৎপর হয়ে উঠলেন।
ধারাবাহিক পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা (প্রয়োজনীয় মাসাইল সহ) pdf islamic book | ডাউনলোড |
---|---|
আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে গেল বিয়ের জন্য কেউ কখনো চেষ্টা করেনি | পড়ুন |
আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ভুমিকা - পিডিএফ ডাউনলোড | ডাউনলোড |
সোশ্যালিজম বা সমাজতন্ত্র কথাটির যিনি প্রথম প্রয়োগ করেন তিনি হলেন ম্যানচেষ্টারের সুতা কলের মালিক রবটি ওয়েন (১৭৭১-১৮৫৮)। তিনি নিজে যথেষ্ট মুনাফা অর্জ'ন করতেন, কিন্তু কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমিকদের অবস্থা দর্শনে তিনি অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েন। নিউলানাক' নামক স্থানে এক আদর্শ কারখানা স্থাপন করেন এবং সেখানে সমবায় বিপণী কায়েম করে, অসুস্থ ও বৃদ্ধ হয়ে পড়লে ভাতা দেওয়ার রীতি প্রবর্তন করে তাঁর নিজের কারখানার শ্রমিকদের অবস্থা কিছুটা উন্নত করতে সক্ষম হলেন। কিন্তু যেহেতু এ এক বেসরকারী একক প্রচেষ্ট। ছিল, তাই সমাজে তা কোন সার্বিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে নি।
সেন্ট সাইমন (১৭৬০-১৮২৪) ও চালর্স' ফুরিয়ে' (১৭৭২-১৮৩৭) সমস্ত পণ্য সরকারী নিয়ন্ত্রণে এনে উৎপাদিত সামগ্রী সকল মানুষকে ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে ভাগ করে দেওয়ার প্রস্তাব করে মেহনতি জনদের অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করলেন।
এরপর প্রচেষ্টা চালালেন লুইব্রাঙ্ক, নৈরাজ্যবাদী জোসেফ প্রধো। (১৮০৯-১৮৬৫) মিখাইল বাকুনীন (১৮১৪-১৮৭৬) প্রমুখ মনীষী। এত করার পরও শ্রমিকদের তেমন উন্নতি পরিলক্ষিত হল না। পূর্বের মত পাঁজিপতিদের পকেট অতিরিক্ত সম্পদ দ্বারা ফুলে ফেপে উঠছিল, আর শ্রমিকদের দিন দিন অন্ধকারের দুর্গম অতলে তলিয়ে যাচ্ছিল।
সমাজতন্ত্র ও শ্রমিক
হাজারো লহর বন্যা বহায়ে, অনেক আশার পিদিম জালিয়ে, শ্রমিক শ্রেণীর রাজত্ব কায়েম করার আবেগময় বাণী শুনিয়ে, লাখো মানুষের কবরের উপর শ্রমিকদের তথাকথিত যে স্বপ্ন রাজ্যগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়; তা সত্যই কি মেহনতিদের তথ্য সর্বহারাদের সকল সমস্যার সুষ্ঠ, সমাধান করতে পেরেছে? অন্যকথায়-সমাজতন্ত্র, দাবির বেড়াজালে নয়; বাস্তবিক ভাবেই কি পুজিবাদী স্বৈরাচারের ফলে যে আধুনিক শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়, এদের সমস্যার কোন ন্যায়ানুগ ও কার্যোপযোগী সমাধান বের করতে পেরেছে?
গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করি যে, আজ পর্যন্ত বক্তৃতান্ত্রিক যত আন্দোলন হয়েছে; যতগুলি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সবগুলিতেই কতিপয় মুষ্টিমেয় লোক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির নিমিত্ত সাধারণ সর্বহারাদেরকে স্বাচ্ছন্দের আশা দিয়ে, তাদেরকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে। পাঁজিবাদীরা রাজতান্ত্রিক ও সামন্ততান্ত্রিক অবস্থায় নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষিত করতে না পেরে গণতন্ত্রের নামে; আর গণতন্ত্র এলে বঞ্চিতদের সার্বিক সুবিধা হবে-এর প্রলোভন দিয়ে সাধারণ মানুষকে সামন্তদের বিরদ্ধে লেলিয়ে দেয়। পরিণামে গণতন্ত্র এলে এর সমস্ত সুবিধার সিংহভাগটাই তারা হাতড়িয়ে নেয়; জনসাধারণ কেবল তাদের উচ্ছিষ্টই চাটবার সুযোগ পায়। ফলে মানুষের অবস্থ! কেমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তা আমরা পূর্বের আলোচনা দ্বারা উপলব্ধি করতে পারি।
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রম
শ্রমিকের আলোচনা করতে যেয়ে শ্রমিকের কথা আপনা-আপনি এসে পড়ে। শ্রমিকদের হাতে পাঁজি বিনিয়োগের কোন উপায় না থাকায় এবং নিজেদেরকে গতর খেটে পেট চালাতে হয় ভেবে তাদের মানসিক কাঠামো স্বভাবতই দুর্বল থাকে। এক লজ্জাজনক অনুভূতির শিকার হয়ে পড়ে তারা।
ইসলাম শ্রমিকদেরকে এই হীনমন্যতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। সোচ্চার হয়ে ঘোষণা করেছে-ওরে! তুই ছোট নস্। কাছে শ্রমের যোগ্যতা নামক সর্বশ্রেষ্ঠ পংজি তাতে নেই কোন অসমতা। গতর খেটে পূজি না থাকলেও তোর মওজুদ রয়েছে। আর উপার্জন করা ইসলামের দৃষ্টিতে কোন লজ্জাজনক কাজ নয়। হালাল রঙ্গী তালাশ করা তাষে ভাবেই হোক অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ-দ্বিতীয় স্তরের ফরয।
নবী-এ-করীম ইরশাদ ফরমান-শ্রমজীবীর উপার্জনই উৎকৃষ্টতর যদি সে সৎ উপার্জনশীল হয়। একবার রসুল করীম সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করা হল-ইয়া রসুল! কোন ধরনের উপার্জন শ্রেষ্ঠতর? তিনি উত্তর করলেন-নিজের শ্রমলব্ধ উপার্জ'ন। রসূলে পাক আরো ফরমান যে ব্যক্তি নিজের শ্রমের উপর জীবিকা নির্বাহ করে তার চেয়ে উত্তম আহার আর কেউ করে না। জেনে রাখ, আল্লাহ'র নবী দাউদ (আঃ) নিজের শ্রমলব্ধ উপার্জনে জীবিকা চালাতেন।