
ধারাবাহিক পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা (প্রয়োজনীয় মাসাইল সহ) | ফজলুর রহমান আশরাফী |
---|---|
প্রকাশনীঃ | মক্কা পাবলিকেশন্স |
বইয়ের সাইজঃ | ৬-মবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ৩৭১ |
বইয়ের ফরম্যাট | PDF E-BOOK |
বিভাগঃ | নামাজ রোজা |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
ওযুর ফযীলত হযরত উসমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযু করে এবং উত্তমরুপে ওযু করে, তার গুনাহ সমূহ তার শরীর হতে বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ হতেও বের হয়ে যায় (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না যে, আল্লাহ তায়ালা কিসের দ্বারা মানুষের গুনাহসমূহ মাফ করে দেন এবং মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেন? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পূর্ণভাবে ওযু করা, মসজিদের দিকে অধিক যাতায়াত করা এবং এক ওয়াক্ত নামায শেষ করার পর অপর ওয়াক্ত নামাযের প্রতীক্ষায় থাকা।
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন কোন মুসলমান বা মুমিন বান্দা ওযু করে এবং চেহারা ধৌত করে তখন, তার চেহারা হতে পানির সহিত অথবা পানির শেষ বিন্দুর সহিত সে সমস্ত গুনাহসমূহ বের হয়ে। যায়, যার দিকে তার দুই চক্ষু দৃষ্টি করেছিল। যখন সে হাত ধৌত করে তখন পানির সহিত অথবা পানির শেষ বিন্দুর সহিত তার হাত হতে সে সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যা তার দুই হাত সম্পাদন করেছিল। এরুপে যখন সে পা ধৌত করে তখন পা হতে সে সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সম্পাদন করতে তার পা অগ্রসর হয়েছিল। ফলে সে (ওযুর স্থান হতে) বের হয় সমস্ত গুনাহ হতে মুক্ত হয় (সহীহ মুসলিম)।
- ওযুবিহীন অবস্থায় কুরআন শরীফ স্পর্শ না করে মুখস্ত নিজে পড়া এবং অন্যকে পড়ানো জায়িয (ফতোয়ায়ে শামী)।
- কুরআন শরীফ যদি গিলাফ অথবা কোন কাপড়ে মুড়ানো থাকে তাহলে তা স্পর্শ করা জায়িয (বাদায়েউস সানায়ে)।
- অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্যে ওযুবিহীন অবস্থায় কুরআন শরীফ পাঠ করা এবং স্পর্শ করা জায়িয।
- ওযুবিহীন অবস্থায় কুরআনের আয়াত লিখা জায়িয। তবে স্পর্শ করা হারাম।
- যে সব তাফসীর গ্রন্থে কুরআনের আয়াতের চেয়ে তাফসীরের পরিমাণ বেশী তা ওযুবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা জায়িয
- দ্বীনী কিতাব যেমনঃ হাদীস, ফিকাহ ইত্যাদি ওযুবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা জায়িয (বাদায়েউস সানায়ে)
- মুদ্রাকর ও বাইন্ডারদের জন্যে ওযুবিহীন অবস্থায় কুরআন শরীফ স্পর্শ করা (ওযরের কারণে) জায়িয। কারণ তাদের জন্যে সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা কঠিন।
- উল্লেখিত সকল অবস্থায় ওযু করে নেয়া মুস্তাহাব ও উত্তম।
ফরয গোসল বিলম্বে করা প্রসংগে
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি অথবা কুকর অথবা গোসল ফরয অবস্থায় কোন জুনুবী ব্যক্তি থাকে সে ঘরে আল্লাহ পাকের রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করে না (আবূ দাউদ)।
জুনুবী ব্যক্তি অর্থাৎ যার উপর গোসল ফরয হয়েছে, তার নামাযের ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করে গোসল করলে সে গুনাহগার হবে না। বিলম্বের কারণে সে বাক্তির উপর ওযু করাও ওয়াজিব হবে না অর্থাৎ গোসল বিলম্ব হলে তাকে ওষু করে থাকতে হবে এটা জরুরী নয়। ওযু করে নেওয়া ভাল। তবে জুনুবী ব্যক্তি যদি নাপাক অবস্থায় এত দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেয় যে, এক ওয়াক্ত নামাযের সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায়, যেমন: ফজরের ওয়াক্ত চলে গেল অথচ সে গোসল করে সঠিক সময়ে নামায আদায় করল না, তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং এ ঘরে আল্লাহর রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করবে না। সে ব্যক্তি ফিরিশতাদের আগমন এবং বরকত হতে বঞ্চিত হবে। এটাই হাদীসের মর্মার্থ। ধারাবাহিক পূর্ণাংগ নামায শিক্ষা
ফরয গোসল করতে বিলম্ব হলে ওযু করে নেয়া উত্তম। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন জুনূবী অবস্থায় থাকতেন এবং কোন কিছু খাওয়ার অথবা ঘুমানোর ইচছা করতেন তখন তিনি নামাযের ওযুর ন্যায় ওযু করে নিতেন (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
ফরয গোসল না করে মানুষের সাথে মেলামেশা করা জায়িয আছে। হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদিন মদীনার এক রাস্তায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে আমার সাক্ষাত হল। আমি তখন জুনূবী ছিলাম। তাই আমি একটু পিছনে সরে গেলাম। আমি গিয়ে গোসল করে তার কাছে ফিরে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আবূ হুরায়রা, তুমি কোথায় ছিলে? আমি উত্তর দিলাম, আমি তো জুনুবী ছিলাম। তাই এ অপবিত্র অবস্থায় আপনার সাথে উঠাবসা করা আমি খারাপ মনে করলাম। তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেনঃ সুবহানাল্লাহ, মুমিনতো এমন অপবিত্র হয় না (যে, সে কারো সাথে মেলাে করতে পারবে না) (আবূ দাউদ)।
তায়াম্মুমের বিধানের ইতিকথা
হযরত ইবনে সা'দ (রাঃ) হযরত মা আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ হিজরীতে যখন বনূ মুস্তালিকের যুদ্ধ সংঘটিত হয় (ইসলামের ইতিহাসে একে মুরাইসিয়া যুদ্ধও বলে), সে যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে আমরা বাইদা বা যাতুল জাইশ নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করি। এ স্থানে আমার গলার হার হারিয়ে যায় এবং সেই হার তালাশ করার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখানেই রাত্রিযাপন করার ইচছা ব্যক্ত করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সাহাবায়ে কিরামদেরও উক্ত স্থানেই রাত্রিযাপন করতে হলো। কিন্তু সেখানে পানির কোন ব্যবস্থা ছিল না বিধায় সকলেই অস্থির হতে লাগলেন এবং কিছু সংখ্যক লোক হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর নিকট এসে অভিযোগ করে বললেন, আপনি লক্ষ্য করছেন কি যে, হযরত আয়েশা (রা ৪) স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এবং আমাদের সকলকে এমন স্থানে অবস্থান করতে বাধ্য করেছেন যেখানে পানির কোন নাম নিশানা পর্যন্ত নেই। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আব্বাজান হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) যখন উক্ত অভিযোগ শুনে রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট এলেন, ঠিক সেই মূহুর্তে রাসূলে কারীম (সাঃ) আমার উরুতে মাথা রেখে ঘুমাচিছলেন, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, মা, তুমি কাফেলার সকলের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাড়ালে ? তোমার জন্যই সকলে পানিহীন স্থানে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া আরো যা কিছু বলার বললেন এবং তিনি আমাকে খোঁচা মারতে লাগলেন। আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে ভেবে আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করলাম না। এমতাবস্থায় রাত্রি প্রভাত হলো এবং ঐ প্রভাতেই তায়াম্মুমের বিধান সম্বলিত পবিত্র কুরআনের আয়াত অবতীর্ন হয়। তায়াম্মুমের নির্দেশ পাওয়ার পর কাফেলার সহযাত্রীরা পানির ব্যবস্থা না হওয়ায় ওযু করার পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করেন। উক্ত সমস্যার সহজ সমাধান ধারাবাহিক পূর্ণাংগ নামায শিক্ষা
নামায ফরয হবার ইতিকথা
হযরত আদম (আঃ) হতে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এ পৃথিবীতে এসেছেন তাঁদের সকলের শরীয়াতেই সালাত তথা নামাযের বিধান ছিল। তবে তাঁদের সালাতের মধ্যে রুকু সিজদা ছিল কিনা এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) বলেন, পূর্ববর্তী খৃষ্টানগণ একাকী নামায আদায় কালে শুধু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করতেন। আর জামাআতের সাথে নামায আদায় করলে রুকুর মাধ্যমে করতেন। তবে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের উপর আমাদের মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয ছিল না। ওলামায়ে কিরামগণ এ বিষয়ে একমত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মি'রাজের পূর্বে দুই ওয়াক্ত নামায অর্থাৎ সূর্যোদ্বয়ের পূর্বে দুই রাকআত এবং সূর্যাস্তের পূর্বে দুই রাকআত আদায় করতেন। এ নামায তিনি ফরয হিসেবে আদায় করেছেন
তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১-৬ খন্ড pdf | ডাউনলোড |
---|---|
মেশকাত শরীফ ১-১১ খন্ড পিডিএফ ডাউনলোড | ডাউনলোড |
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম - মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান pdf | ডাউনলোড |
কিনা এ বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। এছাড়া তিনি তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন। পরবর্তীতে নবুয়্যতের দশম বছরে মি'রাজ রজনীতে পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়। এরপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে পাঠিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে পাচ ওয়াক্ত নামাযের সময় সীমা এবং নামায আদায়ের পদ্ধতি পূর্ণাংগভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামায পূর্ববর্তী সকল নবী রাসূলগণের নামাযের পূর্ণাংগ রুপ। কেননা পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণের উম্মতগণ যে নিয়মে নামায আদায় করেছেন, এর সব কিছু আমাদের নামাযে সন্নিবেশিত রয়েছে। এমনকি পূর্ববর্তী নবীগণ যে যে ওয়াক্তে নামায আদায় করছেন তার সব ক'টি নামায আদায় করা আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে।
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে কাজের হিসাব নেয়া হবেহযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম মুসলমান বান্দার যে আমলটির হিসাব নেয়া হবে সেটি হচেছ ফরয নামায। অতএব, সে যদি তা ঠিকমত আদায় করে থাকে তাহলে তো ভাল কথা। অন্যথায় ফেরেশতাদেরকে বলা হবে, দেখতো তার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি তার আমলনামায় নফল নামায থাকে তাহলে এ নফল দ্বারা তার ফরযের ঘাটতি পূরণ করে দেয়া হবে। তারপর সকল ফরয ইবাদতের বেলায় এরুপই হিসাব করা হবে (ইবনে মাযাহ)। নামায শিক্ষা
নামায মুমিনের মি'রাজ
বিশ্বনবী (সাঃ) এর মি'রাজ গমনের পূর্বে পূর্ণ পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয ছিল না। পূর্ণ পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয হয় নবুয়্যাতের দুাদ্বশ বর্ষে অর্থাৎ হিজরতের এক বৎসর পূর্বে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যখন মি'রাজ রজনীতে আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভের জন্যে যান তখন পূর্ণ পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয হয়।
বিশ্বনবী (সাঃ) এর মি'রাজ লাভ হয়েছিল আসমানে অর্থাৎ উর্ধ্বলোকে, আর, মু'মিনের মি'রাজ লাভ হয় জমিনে। মু'মিন বান্দা যখন পাক পবিত্র হয়ে নামাযের জন্যে মুসাল্লায় (নামাযের বিছানায়) উপস্থিত হয় তখন স্বয়ং আল্লাহ পাক তার সম্মুখে হাজির হন।
এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে যেন ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে, কেননা সে আল্লাহর সাথে কথোপকথনে আছে, যে যাবৎ না সে আপন মুসাল্লায় থাকে। (অর্থাৎ নামায আদায় কালে বান্দা আর আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আড়াল থাকে না। বান্দা সরাসরি আল্লাহর সাথে কথোপকথন করতে থাকে। তাই বলা হয়েছেঃ নামায মু'মিনদের মি'রাজ।