ইসলামে সমাজবিজ্ঞান - ডাঃ এমএ মোসলেহ উদ্দিন free -pdf

ইসলামে সমাজবিজ্ঞান
book cover islame somajbiggan pdf download
ইসলামে সমাজবিজ্ঞান ডাঃ এমএ মোসলেহ উদ্দিন
প্রকাশনীঃ ইসলামিক থ্যাট
বইয়ের সাইজঃ ৪-এমবি
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২১২
বইয়ের ফরম্যাট পিডিএফ ই-বুক
বিভাগঃ ইসলামী আদর্শ
কৃতজ্ঞতায়ঃ বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার

ইতিবাচকবাদ (Positivism) ইতিবাচকবাদ হচ্ছে Comte এর প্রবর্তিত একটি দার্শনিক ধারা। এখানে শুধুমাত্র ইতিবাচক বাস্তবতা ও পর্যালোচনাযোগ্য প্রপঞ্চসমূহের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে উদ্দেশ্য হচ্ছে এগুলোর সূত্র ও সম্পর্কগুলো বিশ্লেষণ করা। এই ক্ষেত্রে আদি উৎস ও কারণসমূহ কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়'। ইতিবাচকবাদ দ্বারা Comte মূলত সামাজিক যথার্থতাকে বুঝাতে চেয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির আলোকেই সমাজের সংস্কার হবে। ইতিবাচকবাদী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল নিরীক্ষার ভিত্তিতে শুধুমাত্র বাহ্যিক বিশ্বের বিশ্লেষণ করা।

Parsons এর মতে একটি মতবাদ হিসেবে ইতিবাচকবাদের বিশ্বাস হচ্ছে এটাই যে সকল মানবিক কর্মকাণ্ডের দিকনির্দেশনা ও বিশ্লেষণের জন্য বিজ্ঞানই যথেষ্ট ও চূড়ান্ত'। ইতিবাচকবাদের প্রয়োগের মাধ্যমে Comte চেয়েছিলেন সমাজবিজ্ঞান তার প্রয়োগ করে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে একে পুনর্গঠিত করতে। এই উদ্দেশ্যে তিনি পুরাতন ধারার সংগঠনবাদকে তাঁর নিজের ইতিবাচকবাদের সাথে সংযুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই Readon এর মতে Comte এর এই প্রকল্প ছিল আভিধানিক। তাছাড়া তার ইতিবাচকবাদও ছিল অনেকটা ত্রুটিপূর্ণ। Comte মূলত দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের অযৌক্তিক সংশ্লেষণের অপচেষ্টায় অভিযুক্ত। তার মহান উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতি, মানবজাতি ও সমাজের একটি সমন্বিত ও সার্বজনীন বিজ্ঞানের প্রবর্তন। তবে মানব মানসিকতার বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়ার কারণে তাঁর ইতিবাচকবাদ অনেকটাই ভিত্তিহীন ও আভিধানিক হয়ে ওঠে। তাছাড়া প্রকৃতিবাদের মোড়কে যে মতবাদের প্রচলন ঘটান তার সাথেও সাংঘর্ষিক।

সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য ধারা

আগেই বলা হয়েছে ইতিবাচক অঙ্গবাদ ছিল প্রাচীন গ্রিক দর্শনের রক্ষণশীলতার সাথে ঊনবিংশ শতাব্দীর উদারতাবাদের সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা। কিন্তু চিন্তাধারায় উভয় মতবাদ ছিল বিপরীতমুখী। সমাজ সম্পর্কিত ধারণার ক্ষেত্রে অঙ্গবাদের মূল ভিত্তি ছিল কৃষ্টি ও প্রথা; আর এগুলোকে ইতিবাচকবাদ মনে করত অন্ধ অনুকরণ ও অযৌক্তিক খোলশ ও প্রাচীন ভ্রান্তির প্রতিফলন। তাই সাংঘর্ষিক এই দুই মতবাদের মধ্যে কখনো সমন্বয় সাধন করা সম্ভব নয়।

তাছাড়া আন্ত-মানবিক সংঘর্ষ পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অঙ্গবাদ ছিল বেজায় দুর্বল। Comte সামাজিক সংঘর্ষকে বেশি ভয় করতেন। তিনি এমন একটি কর্তৃত্ববাদী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে বিরাজ করবে বর্ণ ব্যবস্থা।
প্রতিটি সমাজই মূলত সংঘাতপূর্ণ। Heraclitus সূফীবাদের (Sophists) মত প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকগণ মনে করতেন সামাজিক সংঘর্ষই হচ্ছে সামাজিক বাস্তবাদের প্রাথমিক অবস্থা। মধ্য যুগের আরব বিশ্বে ইবনে খালদুন এর মত দার্শনিকও সামাজিক সংঘর্ষের উপর একটি মতবাদ দিয়ে যান। তাঁর মতে সভ্যতার বিবর্তনে বিদুঈন ও শহরবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। একই সংঘর্ষ ও সংগ্রামের ভিত্তিতে Marchiavelli রাষ্ট্রের উৎপত্তির ব্যাপারে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন। পরবর্তী যুগে সেগুলোর উৎকর্ষ সাধন করেন Jean Bodin, Hobbes ও অন্যান্যরা।

ইতিবাচক অঙ্গবাদ যখন সংঘর্ষজনিত সামাজিক বাস্তবতার ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়। তখন সামাজিক চিন্তার জগতে নতুন এক মোড় দেখা দেয়। আর এই বিদ্যার পুনর্গঠনে প্রচেষ্টার নতুন একটি উদ্যোগ দেখা দেয় সংঘর্ষ কেন্দ্রিক মতবাদের চর্চাকে কেন্দ্র করে।

সামাজিক আচরণবাদ

আকৃতিবাদী সংজ্ঞার আলোকে যখন বিষয়বস্তুও সমাজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অপূর্ণতার শিকার হয় তখন আবির্ভাব হয় সামাজিক আচরণবাদের সমাজ বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নের জন্য নতুন প্রায়োগিক পদ্ধতি প্রবর্তন করতে চায়। এজন্য প্রাচীন ধারাগুলোর পদ্ধতিগত দুর্বলতা ও আকৃতিবাদের প্রয়োগ বিরোধটির প্রবণতা পরিহার করার উদ্যোগ নেয়। খোঁজ শুরু হয় নতুন ইতিবাচকবাদী পদ্ধতির।

নব্য আদর্শবাদ ও তার শাখা প্রশাখাসমূহের সুবাদে ইউরোপে এই নতুন ধারার বিস্তার দেখা যায়। যেমন, বহুত্ববাদী আচরণবাদ, প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ ও সামাজিক কর্ম ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানের জগতে ঢুকে সমাজ বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তুসমূহের সূক্ষতর সংজ্ঞা খুঁজতে থাকে।
যেহেতু বিভিন্ন প্রপঞ্চের সাথে জড়িত সেহেতু Giddings এর নাম দেয় বহুত্ববাদী আচরণবাদ। এই মতবাদ অনুযায়ী স্বতন্ত্র ব্যক্তি ও স্বাধীন দলের বৈচিত্রের সমাহার হিসেবে দেখলেই সামাজিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণ করা সম্ভব।

Gabriel Trade (১৮৪৩-১৯০৪) তাঁর প্রবন্ধসমূহের মাধ্যমে এই ধারার উৎপত্তি ঘটান। তাঁর মতে সমাজের মৌলিক একক হচ্ছে বিশ্বাস ও চাহিদা। আর মৌলিক গতি হচ্ছে পুনরাবৃত্তি, বিরোধিতা ও খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়া যা অনেকটা Hegel-এর সংশ্লেষণ ও বিভাজনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ইসলামে সমাজবিজ্ঞান

Trade এর মতে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এক ধরনের সীমাবদ্ধতা যা প্রচারের সহায়ক এবং খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়া হচ্ছে আবিষ্কার যা কিনা সকল প্রকৃতির উৎস। অনুকরণ হচ্ছে আবিষ্কার অথবা নতুন ব্যক্তিগত মতবাদের সামাজিক প্রচার ও গ্রহণযোগ্যতার প্রক্রিয়া। বিরোধিতা প্রতিভাত হয় যুদ্ধ, প্রতিযোগিতা ও আলোচনার মাঝে, যার শেষ হচ্ছে খাপ খাওয়ানো কিংবা নতুন আদর্শের উৎপত্তি। অনুকরণের মধ্যে দেখা গেছে অনেক সমস্যাই লুকিয়ে রয়েছে। অনুকরণ যখন অস্তিত্ব লাভ করে তখন তা এক জটিল কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়। তখন আর তাকে মৌলিক সামাজিক বাস্তবতা মনে হয় না। এটা কল্পনা করা সহজ যে বানর অনেক কিছুই দেখে দেখে করে। কিন্তু তাকে দিয়ে কোনো কিছু করানো দুরূহ ব্যাপার। তাই প্রকৃত অনুকরণ হচ্ছে শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা থেকে উৎসারিত'। এই মতবাদের যে ঘাটতিটি লক্ষ্য করা গেছে তা হচ্ছে ভাষা সম্পর্কিত আন্ত-মানবিক মিথস্ক্রিয়াকে এখানে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে।

সমাজ বৈজ্ঞানিক মতবাদের বিভিন্ন পরিবর্তন

জীবনধারার বিবেচনায় সমাজবিজ্ঞান অবিরত বিভিন্ন পরিবর্তনের শিকার। এর কারণ যদি কেউ বিশ্লেষণ করে তাহলে সহজেই বোঝে আসবে তা হয়েছে এই জন্য যে খোদ সমাজকে কখনো কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞার আওতায় আনা সম্ভব নয়। অতএব আমরা কিভাবে আশা করতে পারি এর উৎপত্তি, ইতিহাস ও সংবিধান সহজে অধ্যয়ন করা যায় যা কিনা আবার সমাজবিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য?

আরও বই ডাউনলোড করুন
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ এর বই - ইসলামে শ্রমিকের অধিকার pdf ডাউনলোড
ইসলামী দর্শন pdf free download - শিবলী নুমানী ডাউনলোড
তাফহীমুল কুরআন ১-১৯ খন্ড পিডিএফ ডাউনলোড! ডাউনলোড

পৃথিবীতে অনেক বিচিত্র ধরনের সমাজ রয়েছে। এগুলোও আবার সময়ের আবর্তে পরিবর্তনশীল। তদুপরি প্রতিটি সমাজবিজ্ঞানীর রয়েছে নিজস্ব স্বাদ ও রুচি যার প্রভাবে সে সমাজের ব্যাখ্যা তৈরি করে। তাছাড়া সমাজবিজ্ঞানের সাথে অন্যান্য বিজ্ঞানের সাথে নিবিড় সম্পর্ক। তাই একজন সমাজবিজ্ঞানী যখন আন্ত-মানবিক সম্পর্কের জটিল সমস্যার সমাধান করতে চায়। তখন সমাজবিজ্ঞানের পাশাপাশি ইতিহাস ও দর্শনেরও দ্বারস্থ হয়।


শেয়ার করুন