
তারীখে ইসলাম | মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান |
---|---|
প্রকাশনীঃ | আধুনিক প্রকাশনী |
বইয়ের সাইজঃ | ৪-এমবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ২৩৯ |
বইয়ের ফরম্যাট | PDF E-BOOK |
বিভাগঃ | ইসলামের ইতিহাস |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ
হযরত উসামা (রা)-এর বাহিনী সিরিয়াতে অবস্থানকালেই উত্তরাঞ্চলে বনু আব্বাস ও বনু যুবিয়ান গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে। তারা এই মর্মে মদীনাতে একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করে যে, তাদেরকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হোক। জবাবে হযরত আবু বকর (রা) তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, "আল্লাহর শপথ। যাকাত হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে যা পাঠানো হতো তার মধ্যে থেকে যদি একটি বকরীর বাচ্চা দিতেও কেউ অস্বীকৃতি জানায় তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই করবো।" এ ঘোষণা শুনে ঐসব গোত্র বিদ্রোহ করে বসে। তারা মদীনার ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য মদীনা থেকে ১২ মাইল দূরবর্তী যুলকিসসা নামক স্থানে সমবেত হয়। ইতিমধ্যে হযরত উসামা (রা)-এর বাহিনী সফলকাম হয়ে প্রত্যাবর্তন করে। হযরত আবু বকর (রা) হযরত উসামা (রা)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে সেনাবাহিনী নিয়ে নিজেই তাদের মোকাবিলায় অগ্রসর হন। তারা পরাজিত হয়। এতে অন্যান্য যাকাত অস্বীকারকারীরা আপনা থেকেই নিজেদের যাকাত নিয়ে খলিফার দরবারে হাযির হয়।
কুরআন মজীদের সংকলন
কুরআন মজীদ বর্তমানে যেভাবে বিন্যস্ত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় হাফেজদের স্মৃতিতেও সেভাবেই সংরক্ষিত ছিল। তবে লিখিতভাবে একটি গ্রন্থে ছিল না বরং বিভিন্ন ছোট ছোট পুস্তিকাকারে সংরক্ষিত ছিল। ইয়ামামার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক কুরআনের হাফেজ শাহাদাত লাভ করলে হযরত উমর (রা) নবী (স) যেভাবে কুরআন মজীদ বিন্যস্ত করেছিলেন সেইভাবে একটি মাত্র গ্রন্থাকারে বিন্যস্ত করে সংরক্ষণের জন্য প্রস্তাব দেন। হযরত আবু বকর (রা) প্রথমে কিছু আপত্তি করলেও পরে তাঁর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন এবং কাতেবে অহী হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) এ কাজের জন্য আদিষ্ট হন। তিনি অতীব যত্ন সহকারে ছোট ছোট সহীফাসমূহ একত্র করে তার সাথে কুরআন মজীদকে একটি বিন্যস্ত গ্রন্থের আকারে সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেন। হযরত আবু বকর (রা)-এর ইনতিকালের পর উক্ত মাসহাফ হযরত উমরের কাছে সংরক্ষিত ছিল। হযরত উসমান (রা) খলিফা হওয়ার পর তার একাধিক কপি প্রস্তুত করিয়ে অন্যান্য শহরে প্রেরণ করেন। আমীর মুয়াবিয়ার শাসনকালে মদীনার গভর্ণর মারওয়ান হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা)-এর নিকট থেকে হযরত আবু বকর (রা)-এর প্রস্তুতকৃত মাসহাফ নিয়ে ধ্বংস করে ফেলে ।
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু
ইনতিকালের কয়েকদিন আগে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) সাহাবা কিরাম (রা)-এর পরামর্শে হযরত উমর (রা)-কে তাঁর খলিফা নির্বাচিত করেছিলেন। তাই ১৩ হিজরীর ২৩শে জমাদিউস সানী সন্ধ্যার পর থেকে তিনি খিলাফতের মসনদের শোভা বর্ধন করেন। আল্লাহর রাসূলের খলিফা উপাধির পরিবর্তে আমীরুল মুমিনীন উপাধি গ্রহণ করেন। পরবর্তী খলিফাদের জন্যও এই উপাধিই বহাল থাকে।
ব্যক্তিগত জীবন
নাম ছিল উমর (রা), উপাধি ছিল ফারক এবং উপনাম ছিল আবু হাম্স। পিতার নাম ছিল খাত্তাব, মায়ের নাম খাতামা। বংশধারা উর্ধতন নবম পুরুষ কা'ব পর্যন্ত গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশের সাথে মিশেছে।
হযরত উমর (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের ১৩ বছর পর জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়সও নবী (স)-এর বয়সের মত ৬৩ বছর ছিল। নবুওয়াতের সপ্তম বছরে ৩৪ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে সর্বমোট ঊনচল্লিশজন পুরুষ ও এগার জন মহিলা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গাত্র বর্ণ ছিল ঈষৎ রক্তিম, মাথা ভাঁজ বিশিষ্ট, গাল স্বল্প মাংসল, দাড়ি ঘন, মোচের দুই প্রান্ত বড় বড় এবং দেহ দীর্ঘকায় ছিল। শত শত লোকের মাঝে দাঁড়ালেও সব চাইতে উঁচু দেখা যেতো।
PDF BOOK FREE DOWNLOAD ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস | ডাউনলোড |
---|---|
কুরআন হাদীসের আলোকে মরণ ব্যাধি দূর্নীতি pdf | ডাউনলোড |
ইসলামের দৃষ্টিতে কাঙ্খিত পরিবার Bangla PDF - ইউসুফ কারযাভী | ডাউনলোড |
জাহেলী যুগে হযরত উমর (রা)-এর পরিবার ছিল বিশিষ্ট ও সর্বজন পরিচিত। তিনি ছিলেন কুরাইশদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্যতম। বংশ পরিচয়, সৈনিকবৃত্তি, পাহলোয়ানী ও ঘোড়সওয়ারীতে ছিলেন সুদক্ষ। লেখাপড়া জানতেন। কাব্য ও কাব্যিকতার প্রতি আকর্ষণ ছিল। ব্যবসায় উপলক্ষে বহু দূরবর্তী দেশসমূহে ভ্রমণ করেছিলেন। সেজন্য তাঁর মধ্যে দূরদর্শিতা, উদারতা ও অভিজ্ঞতার গুণাবলী সৃষ্টি হয়েছিলো। জাহেলী যুগে দূতিয়ালির দায়িত্বও পালন করতেন।
হযরত উমরের (রা) খিলাফত ব্যবস্থা
ইসলামের ইতিহাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের পর হযরত উমর ফারুকের (রা) যুগই শ্রেষ্ঠ যুগ। মাত্র দশ বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে রোম ও ইরামের রাজতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়। এভাবে ليظهره - عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهِ )সব বাতিল দীনের ওপর তাঁর দীনকে বিজয়ী করে দেবেন) আয়াতাংশটির প্রতিপাদ্য বাস্তব রূপ লাভ করে যে, সেই সময় গোটা পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি ছিল না যা মুসলমানদের প্রতিপক্ষ হয়ে ফলে ফুলে সুশোভিত হতে পারে। বিজিত অঞ্চলের বিশালতা এমন পর্যায়ে পৌছে যে, হযরত উমর (রা)-এর শাসন যুগে পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ এক হাজার ছত্রিশটি শহর অধিকারে আসে।
সেই সময় ইসলামী রাষ্ট্রের বিস্তৃতি ছিল মক্কা থেকে উত্তর দিকে ১০৩৬ মাইল, পূর্বদিকে ১০৮৭ মাইল এবং দক্ষিণ দিকে ৪৮৩ মাইল। পশ্চিমে জেদ্দা ছিল সর্বশেষ সীমান্ত। ব্যবস্থাপনা এত ভাল ছিল যে, গোটা দেশে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় ছিল। কেউ-ই সরকার বিরোধী ছিল না এবং খলিফার আদেশ অমান্য করার দুঃসাহসও কারো ছিল না। এতটা ন্যায় ও ইনসাফ ছিল যে, মুসলিম তো বটেই অমুসলিমরাও সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল।
ফারুকে আযম হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু সংস্কার সাধন অবশ্যই করেছেন। কিতাব ও সুন্নাহর আলোকে নতুন নীতিমালা ও আইন বিধিবদ্ধ করেছেন। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিধিবদ্ধকৃত এসব নীতিমালা ও আইনকেই 'আউয়ালিয়াতে উমর' বলা হয়।
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাঃ)
ফারুকে আযম হযরত উমর (রা)-এর দাফনের পর খলিফা নির্বাচনের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হযরত উমর (রা)-এর অসীয়ত অনুসারে নিয়োজিত হয় ব্যক্তি হযরত উসমান (রা), হযরত আলী (রা), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা), হযরত তালহা (রা), হযরত যুবায়ের (রা) এবং হযরত সা'দ (রা) পরামর্শের জন্য সমবেত হলেন। আলোচনা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হলো। হযরত আবদুর রহমান (রা) ছয়জনের মধ্য থেকে তিন জনের ওপর সমস্ত দায়দায়িত্ব অর্পণের প্রস্তাব করলেন। অতএব প্রত্যেকেই তার মতে যাকে খিলাফতের অধিক উপযুক্ত বলে মনে করে সে তার নাম প্রস্তাব করবে। হযরত তালহা (রা) হযরত উসমান (রা)-এর নাম প্রস্তাব করলেন, হযরত যুবায়ের (রা) হযরত আলী (রা)-এর নাম প্রস্তাব করলেন এবং হযরত সা'দ (রা) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফের (রা)-এর নাম পেশ করলেন। হযরত আবদুর রহমান (রা) বললেন: আমি আমার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। অতএব বিষয়টি এখন হযরত আলী (রা) ও হযরত উসমান (রা) এই দুই ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ দুইজনের মধ্যে যিনি আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের (সা)-এর সুন্নাত ও প্রথম দুই খলিফার নিয়ম-পদ্ধতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দান করবেন তাঁর হাতে বাইআত করা হবে। এ আলোচনার পর পরামর্শ সভার সদস্যগণ নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেলেন এবং খলিফা নির্বাচনের ভার হযরত আবদুর রহমান (রা)-এর ওপর পড়লো।