
ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস | অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুর রব |
---|---|
প্রকাশনীঃ | ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি |
বইয়ের সাইজঃ | ৩-এমবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ১৪৮ |
বইয়ের ফরম্যাট | PDF E-BOOK |
বিভাগঃ | ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনাদর্শ। এ আদর্শের ভিত্তিতে মানব জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী-রাসূলগণকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। হযরত আদম (আঃ) প্রথম মানুষ, প্রথম নবী। হযরত আদম (আঃ) থেকে শেষ নবী পর্যন্ত প্রত্যেক নবীই অহী পেয়েছেন। অহীই ছিল তাঁদের শিক্ষাদানের মূল ভিত্তি।
আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে শ্রেষ্ঠ কিতাব আল কুরআন দান করেন। আল কুরআন মানুষের ইহকালীন এবং পরকালীন জীবনের সকল দিক ও বিভাগ সম্বন্ধে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। আল কুরআনের এ নির্দেশনাকে বাস্তবে রূপদান করেছেন মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ)।
তিনি মাত্র তেইশ বছরের মধ্যে একটি ঘুমন্ত, চরম জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন জাতিকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করলেন কিভাবে? কোন পরশমনির ছোঁয়া তাদেরকে বিশ্ব বিজয়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে শক্তি ও সাহস জোগাল?
বস্তুত "ইকরা” পড়, জ্ঞান অর্জন কর- আল্লাহ তায়ালার এ প্রথম "অহী"র পথ ধরেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সামনে অগ্রসর হন এবং বিজয় লাভকরেন। বাস্তবে মানব জাতিকে মূর্খতার অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্যই মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে আল্লাহ পাঠায়েছেন। তাঁর উপর সর্বপ্রথম অহী নাজিল হয়।
শিক্ষা বিস্তারের জন্য লোক প্রেরণ
ইসলামী শিক্ষা ক্রমান্বয়ে মদীনার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে । সুফফায় শিক্ষা প্রাপ্ত লোকদের শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। তাঁরা বিভিন্ন গোত্রের কাছে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে কুরআন-হাদীস এবং ইসলামের যাবতীয় বিষয় শিক্ষা দিতেন। আবার কখনো বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা প্রতিনিধির মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) এর কাছে শিক্ষক চেয়ে পাঠাতেন।
অষ্টম হিজরী সনে মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সাঃ) আত্তাব ইবনে উসাইদ (রাঃ) কে এখানে তাঁর প্রতিনিধি নিয়োগ করেন এবং মুআয (রাঃ) কেও তাঁর সহযোগী হিসেবে নিয়োজিত করেন। লোকদের কুরআন শেখানো এবং দ্বীনের জ্ঞান দান করার জন্য তিনি তাঁদেরকে মক্কায় রেখে যান।
নাজরান এলাকার প্রতিনিধি দল এসে মহানবীর (সাঃ)-এর কাছে কিছু সংখ্যক শিক্ষক চান। তিনি আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) কে প্রতিনিধি দলের সাথে পাঠিয়ে দেন। — ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
রাসূল (সাঃ) মু'আয ইবনে জাবাল (রাঃ) ও আবু মূসা 'আশআরী (রাঃ) কে ইয়ামান পাঠান। সেখানকার অধিবাসীদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি তাঁদেরকে নির্দেশ দেন। মুআয (রাঃ) ইয়ামান ও হাদরা মাউত এ দু'টি এলাকার শিক্ষা পরিচালক ছিলেন।
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আমলে শিক্ষা
হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলামের প্রথম খলিফা। শিক্ষা-দীক্ষা ও চারিত্রিক মাহাত্ম্যে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। ইসলামী বিপ্লবের সূচনায় এবং অত্যাচার নির্যাতনের কঠিন দিনগুলোতে তিনি ছিলেন বিশ্বনবীর নিত্যসংগী। মহানবীর শিক্ষা, জীবনাদর্শ ও গুণাবলীর অনুসারী হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। তাঁর খেলাফত কাল ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৬৩৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্যাপৃত। তিনি কুরআন-হাদীসে অসাধারণ জ্ঞান ও পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি মাক্কার বিদ্বানদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি কুরআনে হাফেজ ছিলেন। তিনিই প্রথম ইজতিহাদ বিষয়ক নীতি নির্ধারণ করেন এবং ফিকাহ সম্পর্কে অনেক জটিল ও কঠিন প্রশ্নের জবাব এবং স্বপ্নের সর্বাপেক্ষা নির্ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারতেন। তিনি সালাতের ইমামতী করার পর শিক্ষামূলক আলোচনা করতেন এবং কুরআন শুদ্ধ করে পঠনের জন্য ক্বারী নিয়োগ করেন।
ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ২০
কুরআন গ্রন্থবদ্ধকরণ: ইয়ামামার যুদ্ধে ৭০ জন হাফেজ শাহাদাত বরণ করলেন তিনি হযরত ওমর (রাঃ) এর পরামর্শে যায়েদ বিন সাবিতের মাধ্যমে কুরআন সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর মহান কাজ ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা রক্ষার ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ভুমিকা | ডাউনলোড |
---|---|
ইসলাম মানবতার ধর্ম bangla book pdf | ডাউনলোড |
একজন ইমাম ও আমার চোখে দেখা আল্লাহর কুদরত | পড়ুন |
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা তাঁর আমলে আরও প্রসার লাভ করে। তিনি নতুন নতুন মসজিদ স্থাপন করেন এবং দেশের বিভিন্ন মসজিদে জ্ঞান বিস্তারের জন্যে অনেক আলেম ব্যক্তিকে নিয়োগ করেন। মহানবী (সাঃ) এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনের আয়াতসমূহ পাথর, কাপড়, কাঠ, চামড়া ও গাছের পাতায় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় লিপিবদ্ধ, হয়। হযরত আবু বকর (রাঃ) সর্বপ্রথম এ গুলোকে সুবিন্যস্ত করে 'মা নাম দিয়ে নিজের কাছে রাখেন।
আব্বাসীয় আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা
আব্বাসীয় খিলাফাত ৭৫০ হতে ১২৫৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। আব্বাসীয় খেলাফত কালে মোট ৩৭ জন খলিফা ছিলেন। মুসলিম শাসনামলের মধ্যে আব্বাসীয় যুগেই জ্ঞানানুশীলন এবং শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ সর্বাধিক হয়েছিল। এ কারণে ঐতিহাসিকগণ এ যুগকে "স্বর্ণ যুগ” বলে অভিহিত করেছেন। আব্বাসীয় খলিফাগণ বিজয়াভিযান পরিত্যাগ করে জ্ঞান আহরণের সুদূর প্রসারী অভিযান শুরু করেন।
আব্বাসীয়দের পৃষ্ঠপোষকতায় এ সময়ে একটি পূর্ণাংগ শিক্ষা পদ্ধতি গড়ে উঠে। তাঁরা ধ্বংস ও বিলুপ্ত প্রায় ইরাক, মিশর, পারস্য ও গ্রীসের প্রাচীন সাহিত্য, সভ্যতা ও কৃষ্টিকে শুধু রক্ষাই করেননি বরং তাকে জীবনী শক্তিদান করে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলেন। আব্বাসীয় খলিফাগণের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম পন্ডিতগণ চিকিৎসা বিদ্যা, ভুগোল, ইতিহাস, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত ও রসায়ন শাস্ত্রে গবেষণা চালিয়ে এবং বহু নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে তৎকালীন জ্ঞানের পরিধি প্রশস্ত করেন।
শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান
সেকালে শিক্ষকগণ যথেষ্ট সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী ছিলেন। শিক্ষকগণ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলেন। যে সকল শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের কুরআন শরীফ শিক্ষা দিতেন তাঁদেরকে মুয়াল্লিম বলা হত। ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কিত জ্ঞানের জন্য কোন কোন সময় তাঁদেরকে ফকীহ বলা হত।
দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষকগণ 'মুয়াদ্দিব শিক্ষক' নামে অভিহিত ছিলেন। এ শ্রেণীর শিক্ষক সমাজে মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন এবং তাঁরা খলীফাদের সন্তান-সন্ততিকে শিক্ষা দিতেন। তাঁদের সামাজিক মর্যাদা প্রাথমিক শিক্ষকদের চেয়ে অনেক বেশী ছিল।
তৃতীয় পর্যায়ে ছিলেন অধ্যাপকবৃন্দ। উচ্চ শিক্ষাদানে নিযুক্ত শিক্ষকগণকে অধ্যাপক বলা হত। অধ্যাপকবৃন্দ নিজ নিজ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ন্যায় শাস্ত্র, গণিত, ছন্দ ও আইন শাস্ত্র শিক্ষাদানে নিয়োজিত অধ্যাপকগণকে জন সাধারণ খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখত।
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা
প্রথম দিকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খুবই কম ছিল। অনেকে নিয়মিত বেতন পেতেন না। সাধারণ শিক্ষক ও গৃহ শিক্ষকগণ যে বেতন পেতেন তা তাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম হওয়ায় তাঁরা জীবিকা নির্বাহের খাতিরে রোজগারের জন্য অন্য কিছু করতেন। যে শিক্ষকের উপর শাহজাদাদের শিক্ষাদানের ভার ন্যস্ত হতো তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশী সৌভাগ্যবান। কালক্রমে শিক্ষকদের বেতন নিয়মিত হয়ে উঠে এবং সুযোগ সুবিধাও বৃদ্ধি পায়। তাঁদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পায়। শিক্ষক ও দরিদ্র ছাত্ররা মসজিদ, হাসপাতালের আয় এবং ধনী সম্প্রদায়ের চাঁদা হতে সাহায্য লাভ করতেন। তাঁদের কেউ কেউ সরকারী কোষাগার থেকেও ভাতা পেতেন।