
ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা | সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী |
---|---|
প্রকাশনীঃ | আধুনিক প্রকাশনী |
বইয়ের সাইজঃ | ৪-এমবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ২৬৮ |
বইয়ের ফরম্যাট | পিডিএফ ই-বুক |
বিভাগঃ | ইসলামী জীবন ব্যবস্থা |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
এখন অতি সুন্দরভাবে উপলব্ধি করা যেতে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মতবাদের মধ্যে ইসলামী মতবাদই হচ্ছে প্রকৃতি ও বাস্তব সত্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল। একমাত্র এই মতবাদেই দুনিয়া এবং মানুষের মধ্যে এক নির্ভুল সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। এর ভেতরেই আমরা দেখতে পাই: দুনিয়া কোন ঘৃণ্য বা বর্জনীয় জিনিস নয়, অথবা মানুষ এর প্রতি আসক্ত হবে এবং এর আনন্দ উপকরণের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে, এ এমন কোন জিনিসও নয়। এখানে না পুরোপুরি গঠন ক্রিয়া চলছে, আর না চলছে এক তরফা বিপর্যয়। একে পরিহার করা যেমন সংগত নয়, তেমনি এর ভেতরে পুরোপুরি ডুবে থাকাও সমীচীন নয়। না সে পুরোপুরি পংকিল ও অপবিত্র, আর না তার সবটাই পবিত্র ও পংকিলতা মুক্ত। এই দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক আপন রাজত্বের সাথে কোন বাদশাহর সম্পর্কের মতোও নয়। কিংবা জেলখানার সাথে কয়েদীর যে সম্পর্ক সেরূপ সম্পর্কও নয়।
ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা
দুনিয়ার যে কোন শক্তিই তার সেজদার উপযোগী হবে অথবা সে এতখানি শক্তিধর ও ক্ষমতাবানও নয় যে দুনিয়ার প্রতিটি জিনিসের কাছ থেকেই সে সেজদা লাভ করবে। না সে এতটা অক্ষম ও অসহায় যে, তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অভিপ্রায়ের কোন মূল্যই নেই, আর না সে এতখানি শক্তিমান যে, তার ইচ্ছা প্রবৃত্তিই সবকিছুর উর্ধে। সে যেমন বিশ্বপ্রকৃতির একচ্ছত্র সম্রাট নয়, তেমনি কোটি কোটি মনিবের অসহায় গোলামও নয়। এই চরম প্রান্তগুলোরই মধ্যবর্তী এক অবস্থায় তার প্রকৃত স্থান।
ইসলামী জীবন ব্যবস্থার আকর্ষিক শক্তি-পূর্বে যেমন বলা হয়েছে যে, দ্বীন ইসলামের গোটা ব্যবস্থাপনার কেন্দ্র ও ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর সত্তা। এর গোটা ব্যবস্থাপনাই ঐ কেন্দ্রের চারদিকে আবর্তন করছে। এই ব্যবস্থাপনায় যাকিছু রয়েছে-তা মনন ও প্রত্যয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হোক আর পূজা-উপাসনা ও ইবাদাত-বন্দেগীর সাথে সম্পৃক্ত হোক অথবা তা দুনিয়াবী জীবনের কোন কারবারই হোক- তার প্রতিটি জিনিসেরই গতি ঐ কেন্দ্রীয় সত্তার দিকেই নিবদ্ধ এবং প্রতিটি জিনিসই তার আকর্ষণ শক্তির প্রচণ্ড তারের সাথে সংযুক্ত হয়ে আছে। খোদ দ্বীন (আনুগত্য) ও ইসলাম (আত্মসমর্পণ) শব্দ দু'টি-যার থেকে এই ধর্মীয় ব্যবস্থাপনাটি উদ্ভাবিত হয়েছে-তার এই প্রকৃতি ও নিগূঢ় তত্ত্বকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে প্রতিপন্ন করে। দ্বীন ও ইসলাম শব্দের মানেই হচ্ছে এই যে, বান্দাহ তার আল্লাহর সন্তুষ্টির সামনে মাথা নত করে দিবে এবং তাঁরই ইচ্ছার অনুগত হবে।
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِّمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ (النساء : ١٢٥)
"যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে মাথা নত করে দিয়েছে এবং সে সৎকর্মশীলও তার চেয়ে উত্তম দ্বীন আর কার হবে।" (সূরা আন নিসা: ১২৫)
وَمَنْ يُسْلِمُ وَجْهَةٌ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى
"যে ব্যক্তি আপন মুখমণ্ডল আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয় এবং সেই সঙ্গে সে সৎকর্মশীলও হয়, সে তো অত্যন্ত মযবুত রজ্জু আকড়ে ধরলো।"
-(সূরা লোকমান: ২২)
দুই সুলতান - জামান সাদী পিডিএফ ই-বুক ডাউনলোড | ডাউনলোড |
---|---|
কুরআন মহাবিশ্ব মহাধ্বংস - মুহাম্মদ আনওয়ার হুসাইন পিডিএফ ডাউনলোড | ডাউনলোড |
কুরআন কোয়াসার শিঙ্গায় ফুৎকার | ডাউনলোড |
মৌলিক আকীদা ও চিন্তাধারা
ঈমানের বাৎপর্য ও গুরুত্ব
জীবন দর্শন ও জীবন লক্ষ্যের পর এবার আমাদের সামনে তৃতীয় প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়। তা হচ্ছে এই যে, ইসলাম কোন্ ভিত্তির ওপর মানব চরিত্রের পুনর্গঠন করে?
মানুষের সকল কাজ-কর্ম ও ক্রিয়া-কাণ্ডের উৎস হচ্ছে তার মন। কর্ম-কাণ্ডের উৎস হিসেবে মনের দু'টি অবস্থা রয়েছে। একটি অবস্থা হচ্ছে এই যে, তাতে কোন বিশেষ ধরনের চিন্তাধারা বদ্ধমূল হবে না, নানারূপ বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত চিন্তাধারা প্রবিষ্ট হতে থাকবে এবং তার মধ্যে যে চিন্তাটি বেশী শক্তিশালী, সেটিই হবে কাজের প্রেরণাদানকারী। আর দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে এই যে, তা বিক্ষিপ্ত চিন্তাধারার বিচরণক্ষেত্র থাকবে না, বরং তার ভেতরে কতিপয় বিশিষ্ট চিন্তাধারা এমনভাবে দৃঢ়মূল হবে যে, তার গোটা বাস্তব জীবন স্থায়ীভাবে তারই প্রভাবাধীন হবে এবং তার দ্বারা বিক্ষিপ্ত ক্রিয়া-কাণ্ড অনুষ্ঠিত হবার পরিবর্তে সুবিন্যস্ত ও সুসংহত কর্ম-কাণ্ড সম্পাদিত হতে থাকবে।
প্রথম অবস্থাটিকে একটি রাজপথের সাথে তুলনা করা যেতে পারে; প্রত্যেক যাতায়াতকারীর জন্যেই সে পথটি অবাধ, উন্মুক্ত। তাতে কারো কোন বিশিষ্টতা নেই। দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে একটি ছাঁচের মতো; এর ভেতর থেকে হামেশাই একটি নির্দিষ্ট রূপ ও আকৃতির জিনিস ঢালাই হয়ে বেরোয়। মানুষের মন যখন প্রথম অবস্থায় থাকে, তখন আমরা বলি যে, তার কোন চরিত্র নেই। সে শয়তানও হতে পারে, আবার ফেরেশতাও হতে পারে। তার প্রকৃতিতে রয়েছে বহুরূপী স্বভাব। তার দ্বারা কখন কী ধরনের কর্ম-কাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়, কোন নিশ্চয়তা নেই। পক্ষান্তরে সে যদি দ্বিতীয় অবস্থায় আসে তো আমরা বলে থাকি যে, তার একটি নিজস্ব চরিত্র আছে। তার বাস্তব জীবনে একটি নিয়ম-শৃংখলা, একটি ধারাবাহিকতা আছে। পরন্তু সে কোন্ অবস্থায় কি কাজ করবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে।
মজবুত ঈমানের বিষয়
কুরআন মজিদে ঈমানের বিষয় সম্বন্ধে এতো বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তার ভেতর কোন মতভেদের অবকাশ নেই। কিন্তু যারা কুরআনের বাকরীতি অনুধাবন করতে পারেনি, অথবা তার বক্তব্য বিষয় অনুসরণ করতে সক্ষম হয়নি, তাদের মধ্যে কিছুটা ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। কুরআনের বাকরীতি হচ্ছে এই যে, কোথাও সে গোটা প্রত্যয়কে একই সঙ্গে বিবৃত করেছে, আবার কোথাও সময় ও সুযোগ অনুযায়ী তার কোন কোন অংশ বিবৃত করে তারই ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছে। এর থেকে কোন কোন লোক এ ধারণা করে বসেছে যে, ইসলামের প্রত্যয়কে বিশিষ্ট ও বিভক্ত করা যেতে পারে। অর্থাৎ তার ভেতর থেকে কোন একটি কিংবা কোন কোনটির প্রতি ঈমান পোষণই যথেষ্ট আর কোন কোনটি অস্বীকার করেও মানুষ কল্যাণ লাভ করতে পারে। অথচ কুরআনের চূড়ান্ত ফায়সালা এই যে, প্রত্যয় হিসেবে যতগুলো বিষয়কে সে পেশ করেছে, তার সবকিছুই স্বীকার করা আবশ্যক। তার একটি থেকে অপরটিকে কিছুতেই পৃথক করা চলে না। তার সবগুলো মিলে একটি অখণ্ড ও অবিভক্ত সত্তায় পরিণত হয় এবং তাকে সামগ্রিকভাবে মেনে নেয়াই কর্তব্য। তার কোন একটিকেও যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে সে অস্বীকৃতি বাকী সবগুলোর স্বীকৃতিকে নাকচ করে দেবে।