
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা তত্ত্ব ও প্রয়োগ | ইউসুফ আল কারযাভী |
---|---|
প্রকাশনীঃ | ইসলামিক থ্যাট |
বইয়ের সাইজঃ | ৫-এমবি |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ৩০০ |
বইয়ের ফরম্যাট | পিডিএফ ই-বুক |
বিভাগঃ | ইসলামী জীবন ব্যবস্থা |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
অসহায় ও দুর্বলের আশ্রয়স্থল ইসলামি রাষ্ট্র
সবলের স্বার্থ নয়; বরং দুর্বলের অধিকার সংরক্ষণই ইসলামি রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। তাই ইসলামি রাষ্ট্র সম্পদশালীদের থেকে যাকাত সংগ্রহ করে গরিব দুস্থদের মাঝে তা বিতরণ করে থাকে। এমনিভাবে রাষ্ট্রের অন্যান্য রাজস্ব থেকেও এতিম, অনাথ ও সম্বলহারা মুসাফিরের জন্য ইসলামি রাষ্ট্রে সহযোগিতার অংশ নির্ধারিত থাকে, 'যাতে ধন-সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েকটি হাতে সীমাবদ্ধ না হয়ে পড়ে'
(সূরা হাশর, ৫৯: ৭)।
ইসলামের প্রথম খলিফা তার ভাষণে বলেন: 'জেনে রেখো! তোমাদের মধ্যে সবল ব্যক্তি আমার কাছে দুর্বল যতক্ষণ না তার থেকে অপরের অধিকার আদায় করতে পারি, এবং তোমাদের মধ্যে দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে সবল যতক্ষণ না তার প্রাপ্ত অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারি'। ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা: তত্ত্ব ও প্রয়োগ
ইসলামি রাষ্ট্র অসহায় মজলুমদের রাষ্ট্র। শক্তিশালী ও বলবানদের বিষাক্ত থাবায় যারা আক্রান্ত ও জালেমদের পায়ের তলায় যারা পিষ্ঠ এবং তাদের ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার দাপটের সামনে যারা অসহায়ভাবে জীবনাপাত করছে, এ সকল মজলুমকে জুলুম-অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্যই ইসলামি রাষ্ট্র এদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত।
'তোমাদের কি হয়েছে' কেন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করছ না; অথচ মজলুম অসহায় নারী পুরুষেরা চিৎকার দিয়ে বলছে: হে প্রভু! আমাদেরকে এ অত্যাচারী জনপদ থেকে বের করে নাও, আমাদের জন্য তোমাদের পক্ষ থেকে একজন বন্ধু ও একজন সাহায্যকারী তৈরি করে দাও” (সুরা নিসা, ৪: ৭৫)।
চারিত্রিক ও আদর্শিক রাষ্ট্র
ইসলামি রাষ্ট্র হচ্ছে নৈতিক ও আদর্শিক রাষ্ট্র যা সঠিক নিয়ম-নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে এটি আপোষহীন। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক, শত্রু ও মিত্র এবং যুদ্ধাবস্থা ও স্বাভাবিক অবস্থা ইত্যাদি যে কোনো পরিস্থিতিতে এই রাষ্ট্র তার মূলনীতি হারিয়ে ফেলে না। ইসলামি রাষ্ট্র কখনো দু'মুখো নীতি পোষণ করে না এবং দু'ধরনের ভাষায় কথা বলে না। ইসলামি রাষ্ট্রে অন্যায়ের পথ ধরে ন্যায় খুঁজে বেড়ানো এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে কাঙ্ক্ষিত স্বার্থ হাসিল করা গ্রহণযোগ্য নয়। এও রাষ্ট্র ন্যায় ও মহৎ লক্ষ্য অর্জনের বিশ্বাসী, পাশাপাশি সৎ ও সঠিক উপায় অবলম্বনেও আপোষহীন।
ইসলামের মহান নবি সা. তাঁর উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন: "নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মহান ও পবিত্র। তিনি অপবিত্র বস্তু গ্রহণ করেন না"। এখানে অপবিত্র বলতে বুঝানো হয়েছে: সুদ-ঘুষ ইত্যাদি হারাম ও অবৈধ উপায়ে আহরিত সম্পদ যা ভালো ও কল্যাণকর কাজে ব্যয় করা হয়। ইসলামি রাষ্ট্র হচ্ছে সৎ ও উত্তম চরিত্রের সাক্ষাত প্রতিবিম্ব যা ঘোলকলায় পূর্ণ করার মিশন নিয়ে মহানবি সা. প্রেরিত হয়েছিলেন। এটি পুরো মানবতার জন্য উপহার স্বরূপ। আল্লাহর এ জমিনে তাঁর আদল-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে যার একমাত্র মিশন যা সাদা-কালো, আত্মীয়-অনাত্মীয় সবার জন্য সমান।
ইসলামি রাষ্ট্রের প্রকৃতি
ইতঃপূর্বে আমরা 'ইসলামি রাষ্ট্রের অবকাঠামো' শিরোনামে উল্লেখ করেছি যে ইসলামি রাষ্ট্র হচ্ছে ইসলামি মূলনীতিতে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসামরিক (সিভিল) রাষ্ট্র। এটি পাশ্চাত্য ইতিহাসের অতি পরিচালিত সেই ধর্মীয় পুরোহিত রাষ্ট্রতুল্য নয়, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র ও গীর্জার মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ চলে আসছিল, অবশেষে বিপ্লবের মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটে এবং চতুর্দিক থেকে আওয়াজ উঠতে থাকে: সর্বশেষ পাদ্রির নাড়িভূড়ির সাথে তাদের সর্বশেষ রাজত্বকেও দাফন করে দাও"।
কিন্তু সেক্যুলারিজমের তল্পিবাহক আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রীতিমতো অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে যে, ইসলামি রাষ্ট্র হচ্ছে ঐ ধর্মীয় পুরোহিত রাষ্ট্র যেখানে খোদায়ী শাসনের নামে এক বিরাট জগদ্দল পাথর জনগণের ওপর চেপে বসবে। সেক্যুলারিজমের জয়গান গেয়ে ড. ফারাজ ফাউদাহ "ধ্বংস পূর্ব পরিস্থিতি )قبل السقوط(" নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন, যেখানে ইসলামি জীবন ব্যবস্থা এবং ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে রীতিমতো আক্রমণ চালানো হয়েছে। এর প্রতিউত্তর হিসেবে সাহিত্যিক বন্ধুবর অধ্যাপক আবদুর মজীদ সুবহ্ (আল্লাহ তার হেফাজত করুন) যা লিখেছেন তাই যথেষ্ট মনে করি। কিন্তু আমি এখানে সেক্যুলারিজমের সমর্থনে লিখিত লেখকের কিছু কথা উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি