ইসলামী অনুষ্ঠানের তাৎপর্য islami onusthan er tatporjo - মওদূদী pdf

ইসলামী অনুষ্ঠানের তাৎপর্য
ইসলামী অনুষ্ঠানের তাৎপর্য সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী
প্রকাশনীঃ আধুনিক প্রকাশনী
বইয়ের সাইজঃ ২-এমবি
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬
বইয়ের ফরম্যাট পিডিএফ ই-বুক
বিভাগঃ ইসলামী জীবন ব্যবস্থা
কৃতজ্ঞতায়ঃ বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার

আমরা মুসলমানগণ হযরত মুহাম্মাদ (স)-কে 'সরওয়ারে আলম' বলে থাকি, সাদামাটা কথায় এর অর্থ হলো 'বিশ্বনেতা'। হিন্দি ভাষায় এর তরজমা হলো 'জগত গুরু'। ইংরেজীতে বলে (Leader of the world)। দৃশ্যত এটা একটা বড় খেতাব। কিন্তু যে মহাসম্মানিত ব্যক্তিকে এ খেতাব দেয়া হয়েছে তাঁর জীবনের কার্যাবলী বাস্তবিকই এমন যে, তাঁকে বিশ্বনেতা বলা অতিশয় উক্তি নয় বরং এটাই তাঁর ন্যায্য পাওনা।

দেখুন, কোনো ব্যক্তিকে বিশ্বনেতা বলার জন্য প্রথম শর্ত হওয়া উচিত, তিনি কোনো বিশেষ জাতি কিংবা বংশ অথবা শ্রেণীর কল্যাণের জন্য নয় বরং বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য কাজ করবেন। আপনি একজন দেশপ্রেমিক অথবা জাতীয়তাবাদী নেতার এ কারণে যত ইচ্ছা প্রশংসা করুন যে, তিনি তাঁর জনগণের যথেষ্ট সেবা করেছেন। কিন্তু আপনি যদি তাঁর স্বদেশবাসী বা স্বজাতির লোক না হন, তাহলে তিনি কোনো অবস্থাতেই আপনার নেতা হতে পারেন না। যে ব্যক্তির শুভেচ্ছা, ভালবাসা ও কল্যাণকামিতা এবং যাবতীয় কর্মকাণ্ড চীন বা স্পেনের জন্য সীমাবদ্ধ, একজন ভারতবাসী কি কারণে তাঁকে তাদের নেতা বলে মানবে? বরং তিনি যদি নিজের জাতিকে অপর জাতি হতে শ্রেষ্ঠ মনে করেন এবং সে জাতিকে পদানত করে নিজের জাতিকে উপরে উঠাতে চান, তাহলে তো অন্য জাতি তাকে নেতা মানা দূরের কথা, উল্টো তাকে ঘৃণা করতে বাধ্য হবে। বিশ্বের সকল জাতির মানুষ কোনো এক ব্যক্তিকে তাদের নেতা শুধু তখনই স্বীকার করে নিতে পারে, যখন সে নেতার দৃষ্টিতে সকল জাতি ও সকল মানুষ হবে সমান। তিনি সমভাবে সকলের শুভাকাঙ্ক্ষী কল্যাণ কামনার দিক থেকে কোনো অবস্থাতেই একজনকে আরেকজনের উপর অগ্রাধিকার দিবেন না। ইসলামী অনুষ্ঠানের তাৎপর্য

বিশ্বনেতার প্রকৃত অবদান

বিশ্ববাসী জানেন, বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (স) মানবতার সেই মহান ব্যক্তিগণের অন্তর্ভুক্ত, যারা প্রাচীনকাল হতে মানবজাতিকে আল্লাহর ইবাদাত ও নৈতিক চরিত্রের শিক্ষা দেবার জন্য দুনিয়ায় আবির্ভূত হয়েছেন। এক আল্লাহর বন্দেগী এবং পবিত্র নৈতিক জীবনের শিক্ষা, যা সবসময় দুনিয়ার নবী-রাসূল কৃষি ও মুনিগণ দিচ্ছিলেন, সেই শিক্ষা নবী মুহাম্মাদ (স) দিয়েছেন। তিনি কোনো নতুন রবের ধারণা পেশ করেননি এবং অন্য কোনো দুর্লভ চরিত্রেরও সবক দেননি, যা তাঁর পূর্বেকার মানবতার পথ প্রদর্শকদের শিক্ষা হতে ভিন্ন ছিলো, যার কারণে আমরা তাঁকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিত্ব বলে থাকি।

এ প্রশ্নের উত্তর হলো, নিশ্চয় মহানবী (স)-এর আগের লোকেরা আল্লাহর সত্তা ও তাঁর একত্ব সম্পর্কে অবহিত ছিলো। কিন্তু একথা পরিপূর্ণভাবে অবহিত ছিলো না যে, এ দার্শনিক সত্যের মানুষের নৈতিকতার সাথে কি সম্পর্ক রয়েছে। নিসন্দেহে মানুষ নৈতিকতার উত্তম নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত ছিলো। কিন্তু সুস্পষ্টভাবে তাদের জানা ছিলো না যে, জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগে এই নৈতিক নীতিমালার বাস্তব অনুশীলন কিভাবে হওয়া উচিত। আল্লাহর উপর ঈমান, নৈতিক নীতিমালা ও কর্মময় জীবন এ তিনটি ছিলো পৃথক পৃথক জিনিস যেগুলোর মধ্যে যৌক্তিক সম্পর্ক এবং কোনো গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র বিদ্যমান ছিলো না। কেবল মুহাম্মাদ (স) সর্বপ্রথম এ তিনটিকে একত্রে যুক্ত করে একটি ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং এগুলোর এই মিশ্রণের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ সভ্যতা ও সংস্কৃতির রূপ শুধু কল্পনার জগতে নয়, বরং কর্মের জগতেও কায়েম করে দেখিয়ে দেন।

মে'রাজের পয়গাম

ইসলামের ইতিহাসে দুটি রাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হলো, যে রাতে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স)-এর উপর কুরআন মজীদ নাযিল করা শুরু হয়েছিলো। আর দ্বিতীয়টি হলো, যে রাতে মহানবী (স)-এর মে'রাজের সৌভাগ্য হয়েছিলো। প্রথম রাতের গুরুত্বতো সকলেরই জানা যে, মানবজাতির পথপ্রদর্শনের জন্য ঐ রাতে হেদায়াতের সেই আলোকরশ্মি পাঠানো হয়েছিলো, যা বাতিলের অন্ধকারের মধ্যে শত শত বছর পর্যন্ত সত্যের আলো ছড়িয়ে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ছড়াতে থাকবে। কিন্তু দ্বিতীয় রাতের গুরুত্ব কিছু ধর্মীয় আলোচনার মধ্যে হারিয়ে গেছে। খুব অল্পসংখ্যক লোকই জানেন যে, ঐ রাতে মানব সমাজ গঠনের কত বড় কাজ আঞ্জাম দেয়া হয়েছে। আজ এ পবিত্র রাতটির স্মৃতি তাজা করতে গিয়ে আমাদের দেখতে হবে, এ রাত আমাদের জন্য কি পয়গাম বহন করে এনেছে।

শবে বরাত

সাধারণত শবে বরাতকে মুসলমানদের একটি পর্ব বা খুশির দিন বলে মনে করা হয়। এর জন্য কিছু রসম রেওয়াজও গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো বেশ কড়াকড়ির সাথে পালন করা হয়। ধুমধাম ও জাকজমকের বিচারেতো যেন মোহররমের পরপরই এর স্থান। কিন্তু সত্য কথা হলো, এটা অযথা একটি মনগড়া পর্ব। না কুরআন মজীদে এর কোনো ভিত্তি আছে না হাদীস শরীফে। না সাহাবায়ে কেরামের যুগের ইতিহাসে এর কোনো নাম নিশানা পাওয়া যায়। আর না প্রাথমিক কালের বুযর্গানে দ্বীনের কেউ এটাকে ইসলামের পর্ব বলেছেন।

* প্রকৃতপক্ষে ইসলাম রসম রেওয়াজ ও পালা পার্বণের দীন নয়। ইসলামতো একটি সাদাসিদা ও যুক্তিসঙ্গত দীন। এ দীন মানুষকে রসম রেওয়াজের বেড়াজাল থেকে, খেল তামাশার অর্থহীন কাজকর্মে মশগুল হওয়া থেকে বাজে কাজে সময়, শ্রম ও সম্পদ অপচয় থেকে রক্ষা করে জীবনকে বাস্তব সত্যের দিকে আকৃষ্ট করে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা ও কল্যাণের কাজে মানুষকে ব্যস্ত রাখে। এমন একটা দীনে প্রকৃতির সাথে এরূপ কাজের কোনো সামঞ্জস্য নেই যে, সে বছরে একদিন হালুয়া রুটি পাকানো ও আঁতশবাজী করার জন্য নির্দিষ্ট করে দেবে আর মানুষকে বলবে যে, তুমি বিশেষভাবে প্রতি বছর নিজের জীবনের কিছু মূল্যবান সময় ও নিজের কষ্টার্জিত ধনের বেশকিছু অংশ বরবাদ করতে থাকো। এর চেয়েও দূরতম কথা হলো এই যে, ইসলাম এমন কোনো রসম রেওয়াজ পালন করতে অভ্যস্ত করবে, যা শুধু সময় ও টাকা পয়সাই বরবাদ করে না, বরং কোনো কোনো সময় জীবননাশের ঘটনাও ঘটে এবং ঘরবাড়ী পর্যন্ত এই শিখা গিয়ে পৌঁছে। এ ধরনের বাজে কাজের নির্দেশ দেয়াতো দূরের কথা, যদি এমন ধরনের কোনো রেওয়াজ নবী করীম (স)-এর যামানায় বিদ্যমান থাকতো, তাহলে নিশ্চয়ই আইন প্রয়োগ করে তা বন্ধ করে দেয়া হতো। আর এ ধরনের যেসব রেওয়াজ সে সময় প্রচলিত ছিলো তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আরও বই ডাউনলোড করুন
ইসলামে সামাজিক সুবিচার - islame shamajik subicher pdf ডাউনলোড
মুক্তির পয়গাম Islami Book Free Download ডাউনলোড
আল কুরআনের অভিধান - মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মুমিন : al quraner ovidhan পিডিএফ ডাউনলোড ডাউনলোড


শেয়ার করুন