
মহিলা সমাবেশে প্রশ্নের জবাবে | দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী |
---|---|
প্রকাশনীঃ | গ্লোবাল পাবলিশিং নেটওয়ার্ক |
বইয়ের সাইজঃ | ১-২ খন্ড |
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ | ৩২৮ |
বইয়ের ফরম্যাট | পিডিএফ ই-বুক |
বিভাগঃ | ইসলাম শিক্ষা |
কৃতজ্ঞতায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
নারী-পুরুষের সমান অধিকার
প্রশ্ন : ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে এ কথা সত্য, কিন্তু অধিকার দেয়নি-বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিন।
উত্তরঃ ইসলাম নারীকে যেমন সম্মান-মর্যাদা দিয়েছে, অনুরূপ তাঁর অধিকারও প্রদান করেছে। একশ্রেণীর মুসলিম নারীদের অবস্থা হলো, তাঁরা পাশ্চাত্য শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছে বটে, কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানও অর্জন করেনি। এ কারণেই তাঁদের মনে ধারণা জন্মেছে যে, ইসলাম নারীকে অধিকার দেয়নি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারী জাতিকে যে সম্মান-মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছে, তা যদি বর্তমান কালের নারীরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হতো, তাহলে তাঁরা আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার আদায়ের জন্য অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলতো। পৃথিবীর নারীবাদীদেরকে তারা জানিয়ে দিতো, অন্য কোনো অধিকারের প্রয়োজন নেই, আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে যে অধিকার দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করা হোক। সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রেও আল্লাহ তা'য়ালা নারীদেরকে বহু ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ
নারীদের জন্যও যথারীতি সেই সব অধিকারই নির্দিষ্ট রয়েছে যেমন তাদের ওপর পুরুষদের অধিকার রয়েছে। (সূরা বাকারা-২২৮)
আল্লাহ তা'য়ালা নারীদেরকে যে অধিকার দিয়েছে, তা অবশ্যই তাদেরকে দিতে হবে। আর নারীদেরকেও কোরআন ও হাদীস অধ্যয়ন করে আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার সম্পর্কে অবহিত হতে হবে।
মহিলা নবী-রাসূল নেই কেনো?
প্রশ্ন: আল্লাহ তা'য়ালা পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন কিন্তু তাঁদের মধ্যে একজনও নারী ছিলেন না। আমার প্রশ্ন হলো, ইসলামী রাষ্ট্রে মহিলাদের রাষ্ট্রপ্রধান হবার কোনো সুযোগ কোরআনে রয়েছে কিনা?
উত্তর : বুখারী, তিরমিযী ও নাসায়ীর হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, তদানীন্তন পারস্যের রাষ্ট্রপ্রধানের মেয়েকে সেখানের জনগণ যখন নিজেদের বাদশাহ হিসাবে বরণ করে নিয়েছিলো, তখন এ সংবাদ শুনে আল্লাহর রাসূল বলেছিলেন, যে জাতি নিজেদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বসমূহ কোনো নারীর ওপরে অর্পণ করে, সে জাতি কখনো প্রকৃত কল্যাণ ও সফলতা লাভ করতে পারে না।
সৃষ্টিগতভাবে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দৈহিক কাঠামোর দিক থেকে নারী ও পুরুষকে পৃথকভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাঁদেরকে সন্তান ধারণের উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। সন্তান ধারণের উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তত করার লক্ষ্যে যথাযথ বয়সে একজন নারী প্রতি মাসে বিশেষ এক অবস্থার সম্মুখীন হন এবং সে সময়ে তাঁকে নামায-রোযা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেছেন, এ সময়ে নারীর দেহ ও মনে একাধিক পরিবর্তন ঘটে। শারীরিক দিক দিয়ে তাঁরা দুর্বলতায় আক্রান হন। মন-মেজাজ খিটখিটে হতে পারে এবং তাঁর স্মরণ শক্তি কিছুটা হলেও লোপ পেতে পারে। এরপর সন্তান প্রসব করার পর তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটে থাকে। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে কোনো গুরু-দায়িত্ব পালন করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি তাঁর ওপরে কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়াও জুলুম করার নামান্তর। মহিলা সমাবেশে প্রশ্নের জবাবে
মুক্তির পয়গাম Islami Book Free Download | ডাউনলোড |
---|---|
ইসলামের দৃষ্টিতে কাঙ্খিত পরিবার Bangla PDF - ইউসুফ কারযাভী | ডাউনলোড |
নতুন কোম্পানির ব্যবসায় লস হওয়ার কারণ ৷ কামাল আহমেদ বাগী | পড়ুন |
২১ একজন নবীকে দিন রাত অনুক্ষণ তাঁর দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাঁর কাছে সময়ের যে কোনো মুহূর্তে ফেরেস্তা আগমন করেছে, ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, প্রয়োজনে মহান আল্লাহর সাথে কথোপকথন হয়েছে, মসজিদে প্রবেশ করতে হচ্ছে। নারীকে নবী করা হলে তাঁর যখন ঐ অবস্থা সৃষ্টি হতো, তখন তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কোনোক্রমেই সম্ভব হতো না, হায়েজ-নেফাসের সময় তাঁর কাছে যেমন ফেরেস্তা আগমন করতো না এবং তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করাও যেতো না, তিনি মসজিদেও প্রবেশ করতে পারতেন না। হয়তো এ ধরনের অনেক কারণে মহান আল্লাহ তা'য়ালা নারীদের ভেতর থেকে কারো প্রতি নবুওয়াতের দায়িত্ব অর্পণ করেননি।
নির্বাচনে নারী
প্রশ্ন: দেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে নারীকে নির্বাচিত না করার ব্যাপারে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে কোন্ কারণে?
উত্তর: সৃষ্টিগতভাবেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারী ও পুরুষকে ভিন্নভাবে সুষ্টি করেছেন। নারী ও পুরুষের স্বভাব-প্রকৃতি, রুচি, অভ্যাস, মন-মানসিকতা ও দৈহিক শক্তি ইত্যাদির দিক থেকে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ভিন্ন স্বভাব-প্রকৃতি ও দেহ কাঠামো দিয়ে নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করে তাদের কর্মক্ষেত্রেও পৃথক করে দিয়েছেন আল্লাহ তা'য়ালা। পুরুষের দৈহিক কাঠামোর কারণে পৃথিবীর কঠিন কাজসমূহের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তাদের ওপরে আর নারীর ওপর অর্পিত হয়েছে সহজ কাজের দায়িত্ব। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী তথা প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি পদের দায়িত্ব অত্যন্ত কঠিন। প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা নারীর মধ্যেও রয়েছে, এ কথা অবশ্যই সত্য। কিন্তু যে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সেই স্বাভাবিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হলে তাকে অন্যসব দিকের ছোট-বড় দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং তার সে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা কোনোক্রমেই উচিত নয়।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার অপরাপর স্বাভাবিক দায়িত্বসমূহ পালন করা একজন নারীর পক্ষে কি সম্ভব? নারীকে পারিবারিক জীবন-যাপন, গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, সন্তান প্রতিপালন ও ভবিষ্যৎ সমাজের মানুষ তৈরীর কাজ সঠিকভাবে করতে হলে তাকে কিছুতেই রাষ্ট্রীয় ঝামেলায় জড়ানো যেতে পারে না। জার যদি কোনো নারীর প্রতি সে দায়িত্ব অর্পণও করা হয়, তাহলে তার পক্ষে সেই একই সময়ে অন্যান্য স্বাভাবিক দায়িত্বসমূহ পালন করা কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। নারীর প্রতি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করা হলে তাকে অবশ্যই ভিন্ন ৷
আমার স্বামী সুদভিত্তিক ব্যাংকে চাকরী করে
প্রশ্ন: আমার স্বামী একজন নিয়মিত নামাযী মানুষ, তিনি সুদ ভিত্তিক গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরী করেন এবং তার উপার্জিত অর্থ দ্বারা আমাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা হয়। প্রশ্ন হলো, আমার স্বামীর উপার্জন কি জায়েয?
উত্তর: শুধু গ্রামীণ ব্যাংকই নয়, শরীয়াহ্ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যতীত অন্য সমস্ত ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা, চাকরী করা বা কোনোভাবে ব্যাংকের সাথে জড়িত থাকা হারাম। কারণ এসব ব্যাংক সুদ ভিত্তিক আর সুদের সাথে কোনো মুসলমান জড়িত থাকতে পারে না। সুদের মধ্যে অসংখ্য গোনাহ্ রয়েছে, এর মধ্যে সবথেকে ছোট্ট গোনাহ্ হলো, নিজের মাকে বিয়ে করার অনুরূপ.। সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরী করেন, তাদের উপার্জন হারাম আর হারাম উপার্জনে কোনো বরকত পাওয়া যাবে না। যাদের স্বামী বা স্ত্রী সুদ ভিত্তিক ব্যাংক বা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন, তাদের স্ত্রী এবং স্বামীকে বলতে হবে, অন্য কোনো হালাল প্রতিষ্ঠানে যেন চাকরীর চেষ্টা করে বা উপার্জনের হালাল পন্থা অনুসন্ধান করে।
আর এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে যে, তিনি যেন হালাল পথ উন্মুক্ত করে দেন। চাকরিজীবী সমস্ত মুসলমান যদি সুদ ভিত্তিক ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বা এক যোগে পদত্যাগ করে, তাহলে মুসলিম দেশে এসব প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে এবং জাতি সুদের গোনাহ্ থেকে মুক্ত থাকবে। ইসলামী রাষ্ট্র থাকলে এই অবস্থার কথা কল্পনাও করা যেতো না। তবে যতক্ষণ অন্যত্র উপার্জনের ব্যবস্থা না হয়, ততক্ষণ অনিচ্ছা ও ঘৃণার সাথে এসব প্রতিষ্ঠানেই থাকা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। তবে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা যাবে না, হালাল পন্থা অনুসন্ধান করতে হবে। শুধু ব্যাংকিং সেক্টরই নয়, সর্বত্র হারামের সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং এটা মুসলিম নারী ও পুরুষের ঈমানী দায়িত্ব।